বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিদ্রোহীদের ঘাঁটি রয়েছে বলে বহুদিন ধরে অভিযোগ করা হলেও এই প্রথমবারের মতো ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বলেছে সেখানে বিদ্রোহীদের কোনো ঘাঁটি বা আস্তানা অবশিষ্ট নেই।
সংস্থাটির মহাপরিচালক কে কে শর্মা পিটিআই’কে জানান, গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে চমৎকার ও ইতিবাচক সহযোগিতার কারণে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
শর্মা বলেন, আমরা যখনই বাংলাদেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের অবস্থান বা সীমান্ত পারাপারের ব্যাপারে খবর পেয়েছি তৎক্ষণাৎ তা প্রতিপক্ষের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি)’কে অবহিত করেছি।
তারা তৎক্ষণাৎ অভিযান পরিচালনা করেছে। ফলে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে।
শর্মা বলেন, বাংলাদেশে এখন ভারতীয় বিদ্রোহীদের কোনো স্থায়ী শিবির নেই। এখন কিছু থাকলেও সেগুলো ভাসমান প্রকৃতির।
ভারতীয় পক্ষ একে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহ দমন প্রচেষ্টায় একটি বড় রকমের সফলতা হিসেবে দেখছে।
বিএসএফ কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে ত্রিপুরা ও মিজোরামের বিদ্রোহীদের ভারত-বিরোধী তৎপরতা বন্ধ করতে বিজিবি সেখানে বেশ কিছু দমন অভিযান চালায়। ফলে এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।
এসব এলাকায় বিজিবি স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করেছে বলেও জানান বিএসএফ কর্মকর্তারা।
৮৭ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পুশব্যাক: স্বীকার করলো বিএসএফ
গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে যে রোহিঙ্গা সঙ্কট চলছে, তার মধ্যে ভারতের সীমান্তরক্ষীরাও অন্তত ৮৭জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে বিএসএফ জানিয়েছে।
দিল্লিতে বাহিনীর পরিচালক কে কে শর্মা বলেন, বাংলাদেশের দিকে বিজিবি সেটা টের পাওয়ার পর যথারীতি খুশি হয়নি এবং পাল্টা তাদের ভারতে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছে – যদিও সেই চেষ্টা সফল হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। খবর বিবিসির।
বিবিসি এ বিষয়ে বিজিবি-র প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি, তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত নজর রাখে, পশ্চিমবঙ্গের এমন একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে রোহিঙ্গাদের ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে বলে তাদের কাছে অন্তত কোনো খবর নেই।
বিএসএফ বলছে গত আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে নতুন করে যে রোহিঙ্গাদের ঢল নামা শুরুর পর থেকে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে।
এমন কী অন্ধকারে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের গতিবিধি শনাক্ত করতে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা আনানো হয়েছে – সীমান্ত এলাকার রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বিএসএফের প্রধান কে কে শর্মা বলেন, ‘আমার কাছে যা পরিসংখ্যান আছে তার ভিত্তিতে বলতে পারি গত কয়েক মাসে আমরা অন্তত ৮৭জন রোহিঙ্গাকে আটক করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছি। তবে সত্যি কথা বলতে কী, সীমান্তের অন্য পারে বিজিবি যখনই টের পায় আমরা পুশব্যাক করেছি তারা মোটেও খুশি হয় না। তবে যেহেতু দুই বাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, তাই একে কেন্দ্র করে এখনো কোনো সংঘাত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দু’একটা ঘটনায় তারা আবার অন্য জায়গা দিয়ে তাদের ভারতে ঠেলে দিতে চেষ্টা করেছে ঠিকই- কিন্তু আমরা সেগুলো ঠেকিয়ে দিতে পেরেছি। আপাতত এভাবেই চলছে।’
তবে যে রোহিঙ্গাদের ভারত বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছে বলে দাবি করছে, তারা ভারতে সদ্য পা-রাখা রোহিঙ্গা না কি বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই এ দেশে ছিলেন, বিএসএফ প্রধান তা স্পষ্ট করেনি।
এদিকে এ বিষয়ে বিজিবি-র বক্তব্য জানতে বাহিনীর পরিচালক থেকে শুরু করে মুখপাত্র পর্যায়ে এদিন বিকেলে বিবিসি বারবার ফোন করেছিল, কিন্তু ফোনে তাদের পাওয়া যায় নি। অন্য দিকে বিএসএফের দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম, গোটা সীমান্ত এলাকা জুড়ে যাদের খুব ভাল নেটওয়ার্ক আছে।
সংস্থার কর্ণধার কিরীটি রায় বিবিসিকে বলছিলেন রোহিঙ্গাদের বিএসএফ পুশব্যাক করছে বলে তাদের অন্তত কিছু জানা নেই। তার কথায়, ‘রোহিঙ্গারা ভারতে আসছেন তাতে কোনো ভুল নেই। গ্রেপ্তারও হচ্ছেন, কোর্টের দলিলে তাদের শতকরা ৮০ ভাগকে রোহিঙ্গা বলেই অভিহিত করা হচ্ছে। আমরা অন্তত একজন রোহিঙ্গাকে কোর্টের নির্দেশেই জাতিসংঘের হাতে তুলেও দিয়েছি। কিন্তু সীমান্তবর্তী অন্তত ছ-সাতটা জেলায় আমাদের লোকজন আছে, বিএসএফ যে পুশব্যাকের কথা বলছে আমরা অন্তত তার কোনো প্রমাণ পাইনি।’
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গাদের সরকার হুমকি বলে মনে করে।
সেই মামলাতেই রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই অধীন বিএসএফ বলেছে, ভারতে রোহিঙ্গাদের কোনো ভাবেই ঢুকতে না-দিতে তারা বদ্ধপরিকর।