‘প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা’ এমন বক্তব্য দিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত। আর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষকরাও জড়িত।
রবিবার সকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে এমন কথা জানান দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা এলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। আর এর সঙ্গে কিছু অসাধু চক্র জড়িত থাকে। এমনকি এর সঙ্গে সরকারি পর্যায়ের লোকজনও বাদ যান না। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। তারা এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ড, বিজি প্রেস, ট্রেজারি, পরীক্ষা কেন্দ্রসহ আরো কিছু অসাধু চক্র জড়িত।
নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরকারি লোকজন জড়িত আছে। আমরা কিছু শনাক্তও করেছি। আমাদের শক্ত অস্ত্র আছে। সেটা দিয়ে তাদের বের করে ধরপাকড় করা। কিন্তু আমরা তো সেই কাজে আসিনি। আমরা চাই, এ দেশের বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তারা যাতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা সেটা যেন হয়।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, মন্ত্রণালয় যে পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত, তা বলা যাবে না। তবে দুর্নীতিমুক্ত করতে চেষ্টা চলছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোচিং বাণিজ্য একটি অন্যতম উৎস বলেও মনে করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা বলছি না, শতভাগ আমরা দুর্নীতিমুক্ত। ক্লাসে না পড়িয়ে বাধ্য করে বাড়িতে গিয়ে পড়তে। এর ব্যাখার দরকার নাই। যত ভালো শিক্ষক, তত কম পড়ায়।
বৈঠকে প্রশ্নপত্র তৈরি এবং বিতরণ-সংশ্লিষ্ট কাজে মেধাবী ও মূল্যবোধসম্পন্ন লোকদের নিয়োগ দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।
দুদক টিমের ওপর হামলায় ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামী করে মামলা
সিলেট: সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুদকের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)কে আসামী করে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে এ মামলা হয় বলে জানান কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুহেল আহাম্মদ।
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হন দুদক কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ওই রাতে দুদক সিলেট কার্যালয়ের পরিচালক শিরিন পারভীন কতোয়ালি থানায় হাজির হয়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা সাধারণ ডায়রি হিসেবে গ্রহণ করে।
বৃহস্পতিবার সিলেট মূখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম সাইফুজ্জামান হিরু এই সাধারণ ডায়রি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সাধারণ ডায়রিটি মামলা হিসেবে রুজু হয় বলে জানান ওসি সুহেল আহাম্মদ।
তিনি বলেন, জিডিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বাণিজ্য উচ্চমান সহকারী আজিজুর রহমান ছাড়া আর কারো নাম উল্লেখ নেই। তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তার অধীনস্থ একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের হামলা ও সরকারী কাজে বাধা দানের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাদের মামলায় আসামী করা হবে।
সিলেটের বর্তমান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)-এর দায়িত্বে আছেন আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে হামলার শিকার হন দুদক কর্মকর্তারা। এতে দুদকের কয়েকজন সদস্য আহত হন। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অন্য কর্মচারীদের বাধার মুখে আজিজুরকে আটক করেও নিয়ে যেতে পারেনি দুদক। পরে সোমবার ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ওইদিনই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। হামলার ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়।