দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সফলতা পেতে হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব স্বীকার করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর। পাশাপাশি পাকিস্তানকে তার মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় উৎখাতের কৌশলে মৌলিক পরিবর্তন আনারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন নীতি ঘোষণার পর কংগ্রেসের কাছে পেশ করা প্রথম রিপোর্টে পেন্টাগন জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে স্বার্থগত মিল রয়েছে এমন ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা জোরদারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বহু ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে। কিন্তু সাংঘর্ষিক ক্ষেত্রে একতরফা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
‘এনহেন্সিং সিকিউরিটি এন্ড স্ট্যাবিলিটি ইন আফগানিস্তান’ শীর্ষক রিপোর্টে এই অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে পেন্টাগনের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত এখনো বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের নিরাপদ আশ্রয়। এগুলো দু’দেশের জন্যই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি তা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে।’
১০০ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে স্বীকার করা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে অভিযান শুরু করেছে তাতে সন্ত্রাসীদের কিছু আশ্রয়স্থল ধ্বংস হয়েছে। তবে তালেবান ও হক্কানি নেটওয়ার্ক এখনো পাকিস্তানে অবাধে তৎপরতা চলানোর সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।
সকল সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গুরুত্ব সম্পর্কে পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সকল পর্যায়ে বার্তা পৌছানো হচ্ছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরো বলা হয়, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর ওপর চাপ অব্যাহত রাখা এবং অভিন্ন সীমান্তের দু’পাশে টেকসই নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ।
পেন্টাগন জানায়, আফগান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে না বলে কাবুলে আস্থার ঘাটতি এবং আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমারিক সহযোগিতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এতে টেকসই নিরাপত্তা অর্জন করা যাচ্ছে না।
আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ও পুনর্মিলন প্রক্রিয়া জোরদারের লক্ষ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে নিয়ে একটি নতুন প্রক্রিয়া তৈরির কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন অর্থবছরে আর্থিক অগ্রাধিকার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে নতুন প্রক্রিয়াকে গত ২১ আগস্ট প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত দক্ষিণ এশিয়া নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পররাষ্ট্র দফতরের ইন্সপেক্টর জেনারেল স্টিভ লিনিক বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া তথা আফগানিস্তানের ব্যাপারে আমাদের নতুন প্রক্রিয়া (এ্যাপোচ)’র মানে হলো ভারত ও পাকিস্তানের ব্যাপারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নিরাপদ আশ্রয় ধ্বংস করা এর লক্ষ্য।’
এই নতুন প্রক্রিয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো তালেবানদের সঙ্গে পুনর্মিলনের পরিবেশ সৃষ্টি এবং এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করা যা আফগান জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে দেশটির সরকারের জন্য সহায়ক হবে।
পররাষ্ট্র দফতর বর্তমানে পাকিস্তানে গুরুতর ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এ বছরের রিপোর্টে পাকিস্তানকে দেয়া সন্ত্রাসদমন সহায়তা কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ও তদারকির ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাগুলোর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, বিষয়গুলোর সন্তোষজনক তদারকির জন্য পাকিস্তানে পররাষ্ট্র দফতরের কোনো কর্মকর্তা নেই। তাছাড়া কর্মসূচির লক্ষ্য অর্জনে কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা পরিমাপের জন্য কোনো অর্থবহ পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়নি।