যুক্তরাষ্ট্র এমনভাবে জেরুজালেমকে দিয়ে দিয়েছে, যেন এটা আমেরিকার কোনো শহর। এই ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প সীমা লঙ্ঘন করেছেন’ বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
বুধবার ইস্তাম্বুলে আয়োজিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)’র মুসলিম নেতাদের এক জরুরি বৈঠকে, ‘জেরুজালেম সব সময়ই ফিলিস্তিনের রাজধানী এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সতর্ক করে বলেছেন, জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে ‘কোন ধরনের শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ আসবে না। খবর এএফপি’র।
আব্বাস বলেন, ‘জেরুজালেম আজীবনের জন্য ফিলিস্তীনের রাজধানী হবে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আসবে না। এর আর কোন বিকল্প নেই।’
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ তারা ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে।’
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতিদানকে ট্রাম্পের ‘মহা অপরাধ’ ও একে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
এর আগে ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে ওই শহরে সরিয়ে নিতে ট্রাম্পের ঘোষণা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে হয়েছে বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনিরা পূর্ব-জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী বিবেচনা করে।
১৯৬৭ সিরিয়া, মিসর এবং জর্দানের সঙ্গে যুদ্ধে জেরুজালেমের পূর্বাঞ্চল দখল করে ইসরায়েল। এর আগে ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পবিত্র এই শহরটির পশ্চিমাঞ্চল দখল করে তারা। পূর্ব জেরুজালেম দখলের ফলে পুরো শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ। যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, জেরুজালেম থেকে যায় ফিলিস্তিনের অংশ। সে আইনের তোয়াক্কা করে না ইসরায়েল। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রও জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
ট্রাম্পের ঘোষণা রুখতে সবকিছু করতে হবে: রুহানি
ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের ঘোষণা রুখে দিতে মুসলমানদেরকে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে বলে জোরালো আহবান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি।
তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি’র শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্পের ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন।
ড. রুহানি আরো বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই মুসলিম দেশগুলো দ্রুত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা মার্কিন প্রশাসনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় তুলে ধরেছে এবং ওআইসি’র শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে ট্রাম্পের ভুল পদক্ষেপের বিপরীতে সঠিক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বেলফোর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে ক্ষতের শুরু হয়েছিল একশ’ বছর ধরে তার ব্যথা অনুভব করছে মুসলমানেরা এবং ট্রাম্পের বেআইনি ঘোষণার মধ্যদিয়ে এখন নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। কিন্তু সমস্ত উপায় অবলম্বন করে আমেরিকার এই অভদ্রোচিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
হাসান রুহানি বলেন, ইসরাইলকে মোকাবেলার পরিবর্তে আমাদের অঞ্চলের কিছু দেশ ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়ে আমেরিকা ও ইহুদিবাদীদের সঙ্গে জোট করে চলেছে। এ ধরনের তৎপরতায় ইসরাইল স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং চেপে ধরবে। তিনি ইহুদিবাদীদের বিপজ্জনক প্রকল্প সম্পর্কে মুসলিম দেশগুলোকে সতর্ক করেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, কোন উপাদান ও কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের নিষ্ঠুর এবং ধর্ম অবমাননাকর সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করেছে তাও আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কিছু দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এমনকি, ইসরাইলের সঙ্গে পরামর্শ ও সহযোগিতা করার ঘটনা ট্রাম্পকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, গত কয়েক দশক ধরে ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও নির্যাতন করে আসছে এবং তার প্রতি আমেরিকা অন্ধ সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই আমেরিকাকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই পরিষ্কার যে, আমেরিকা কখনো সৎ মধ্যস্থতাকারী ছিল না এবং কখনো হবেও না।
ফিলিস্তিনের চলমান সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট রুহানি সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- মার্কিন পদক্ষেপের নিন্দা জানানো, নানা মতভেদ সত্ত্বেও বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করা, ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলা, ফিলিস্তিন ইস্যুকে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ এজেন্ডায় রাখা ও ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্রের বিপদ ভুলে না যাওয়া। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদকে নিজেদের দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি ইহুদিবাদী সরকারের পদক্ষেপের প্রতি মুসলিম বিশ্বকে প্রতি মুহূর্তে নজরদারি করার আহ্বান জানান এবং প্রয়োজনীয় ইস্যুতে ওআইসি’র মন্ত্রী পর্যায়ে কিংবা শীর্ষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব দেন।
নিজের অবস্থান আরো জোরালো করতে জেরুজালেমে অবৈধ বসতি নির্মাণও অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। চৌদ্দতম জেনেভা কনভেশনে এর বিরুদ্ধে বেশকিছু রেজুলেশন আনে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়, কোনো দখলদার দেশ দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে নাগরিকদের অন্যত্র সরাতে পারবে না। কিন্তু ১৯৬৭ সাল থেকে এই কাজটিই করে যাচ্ছে ইহুদিবাদী দেশটি।