ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি অসহযোগিতামুলক।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষা করার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে।
নিকি হ্যালে বলছেন, বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যা কিনা ক্ষতি এনেছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে থাকতে পারেনা।
পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান নিলো যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে।
ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে আবারো বিষয়টির মীমাংসায় দুই দেশের আলোচনার প্রতি জোড় দেন। আর ফরাসী প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যেই আরো ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে। জরুরি বৈঠকে কার্যত যুক্তরাষ্ট্র সবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের দমন পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরো উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে।
তবে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানোন বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এদিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুসালেমের মার্কিন স্বীকৃতির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ চলছে।
দক্ষিণ ইসরাইলের শহর সেডেরোটে গাযা থেকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে, অন্যদিকে ইসরাইলি বিমান গাযার কিছু লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে
এদিকে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার জেরে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ বেঁধেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় সংঘর্ষে অন্তত দু’জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদে বলা হয়েছে, গাজায় শুক্রবারের সংঘর্ষে অন্তত দু’জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট শুক্রবার জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে অন্তত দুইশ ১৭ জন আহত হয়েছে। গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে রাবার বুলেট লেগেছে এবং তাদের লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা বলছে, তাদের মধ্যে ৫০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার হ্যারি ফাওসেট জানান, সেখানে বিক্ষোভ অনেকটাই শান্তিপূর্ণ রয়েছে। দু’দিনের মধ্যে আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত।
তিনি আরও জানান, সেখানকার বিক্ষোভকারীদের আবেগ অনেকটাই বেশি। তবে সেখানে ব্যাপক চেঁচামেচি হচ্ছে। ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানো হচ্ছে। জোরে স্লোগান দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়েছে ইসরাইলি সেনারা। গাজাতেও রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে ইসরাইলি সেনারা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনিরা। এমনকি ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয় এবং সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়া হয়েছে