
এবার রাজশাহীর পবার মাঝারদিয়াড় সীমান্তে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) তিন সদস্যকে আটক করলো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রবিবার গভীর রাতে তিন বিএসএফ সদস্য সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে পড়লে তাদের আটক করা হয়।
আজ সোমবার সকালে রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইফতেখার শামীম আল মাসুদ তিন বিএসএফ সদস্যকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রবিবার গভীর রাতে অবৈধভাবে বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে পড়েছিল। এরা সবাই ভারতের মুর্শিদাবাদ সীমান্তের হাড়ুডাঙ্গা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্য। ইতোমধ্যে বিএসএফের ৮৪ ব্যাটালিয়ানের কমান্ডারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফেরত দেয়া হবে।
বিজিবি সূত্র জানায়, গরু পাচারের সময় বিএসএফ সদস্যরা মাঝারদিয়াড় সীমান্তে কাছাকাছি টহলে আসে। একই সময়ে বিজিবি সদস্যরাও টহল দিচ্ছিল। এ সময় একদল গরু ও মাদক চোরাকারবারি ভারতের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
বিএসএফ সদস্যরা ওই চোরাকারবারিদের তাড়া করতে করতে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়ে। এসময় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিজিবি সদস্যরা তিন বিএসএফ সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
বিজিবির ওপর বিএসএফ’র হামলা-ফাঁকা গুলি, আহত ৩
উল্লেখ এর আগে গত ১৩ নভেম্বর কুমিল্লা সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে বিএসএফ সদস্যরা ফাঁকা গুলি চালিয়ে তিন বিজিবি সদস্যকে আহত করে। ওইদনি বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের কেরানীনগর মধ্যমপাড়া গোলাবাড়ি বিওপি সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর এদিন বিকাল ৫টার দিকে উভয় দেশের বিজিবি ও বিএসএফ অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৭টার দিকে শেষ হয়।
ঘটনার পর থেকে সীমান্তবর্তী ওই এলাকার জনগণের মাঝে আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। ওই ঘটনায় কুমিল্লা সীমান্তে বিজিবির অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানান, এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কুমিল্লা সীমান্তের কেরানীনগর মধ্যমপাড়া এলাকার বাংলাদেশ সীমান্তে দুই নারীকে চোরাকারবারী সন্দেহে ধাওয়া করে বিএসএফর এক সদস্য নো-ম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ৩শ’ গজ ভেতরে ঢুকে ওই নারীদের আটকের চেষ্টা করে। এসময় বিজিবির গোয়েন্দা বিভাগের ফিরোজ নামের এক সদস্য বিএসএফ সদস্যকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ ও তাদের আটকের কারণ জিজ্ঞাসা করেন।
এসময় বিএসএফ সদস্য ও ভারতের ৮/১০ জন স্থানীয় লোক বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য ফিরোজকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে বাংলাদেশের স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে এবং বিএসএফ সদস্যকে ধরে স্থানীয় গোলাবাড়ি বিজিবি ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বাহালুল, স্থানীয় বাসিন্দা রিপন, বাপ্পী, কলেজ ছাত্র মাজহারুল ইসলাম ও মাহমুদসহ স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার একপর্যায়ে ভারতের ৪০/৫০ জন লোক ও বিএসএফর ২৫/৩০ জনের সশস্ত্র সদস্যরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এ সময় টহলরত দুই বিজিবি সদস্য ও বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য ফিরোজকে বেধড়ক মারধর করে।
একপর্যায়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টির জন্য বিএসএফ ফাঁকা গুলি চালায়। স্থানীয় বাংলাদেশি লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেলে বিএসএফ ও ভারতীয় লোকজন পালিয়ে যায়। এসময় বিজিবির একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ৩ বিজিবি সদস্যকে উদ্ধার করে বলে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান।
পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কুমিল্লা ১০ বিজিবির কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম সারোয়ার সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত, অধিনায়ক পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। বৈঠকে বিএসএফ প্রতিনিধিরা ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।