জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার পর গাজার পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে অন্তত দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর দ্যা গার্ডিয়ানের।
গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৩০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিন নিহত হওয়ার পর গুলিতে নিহত হন ৫৮ বছর বয়সী আরেকজন। অপর একজন গুরুতর আহত হন।
এদিকে শুক্রবার রাতে ফের বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার পর এটা ইসরাইলের দ্বিতীয় দফা বিমান হামলা বলে জানা গেছে। শুক্রবার দিনভর বিক্ষোভের সময় ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা খুবই গুরুতর।
হামাসের রকেট হামলার জবাবে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে এ বিমান হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরটি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে আইডিএফ জানায়, শুক্রবার হামাসের রকেট হামলার জবাব দিতে গাজায় এ হামলা চালানো হয়েছে। হামাসের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অস্ত্রাগার এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এ সময় বিমান হামলায় আহতদের জন্য হামাসকেই সম্পূর্ণ দায়ী করে আরডিএফ।
ইসরায়েল দাবি করে, শুক্রবার প্রথমে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিনটি রকেট ছোঁড়ে হামাস। তবে ওই রকেট হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানা যায়নি।
ফিলিস্তিনি নেতারা শুক্রবার ইন্তিফাদার ডাক দেওয়ার সহিংসতার আশঙ্কায় ইসরাইল পশ্চিম তীরে আগে থেকেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছিল। পূর্ব জেরুজালেমে ওল্ড সিটির বাইরে পুলিশ শত শত বিক্ষোভকারীকে হটিয়ে দিতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-ধর্মঘট করছে। তাদের ঠেকাতে শত শত অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল।
বিক্ষোভকারীদের গাড়ির টায়ার জ্বালানো এবং পাথর ছুড়ে মারার জবাবে ইসরাইলি সেনারা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়াসহ তাজা গুলিবর্ষণও করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, গাজা থেকে ইসরাইলে দুটো রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
গাজায় ইসরাইলি সেনারা গুলিও করেছে। এ ঘটনায় ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের সীমান্ত বেষ্টনী এলাকায় সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে।
এছাড়া জেরুজালেমসহ বেথলেহেম, রামাল্লাহ ও অন্যান্য শহরগুলোতেও বিক্ষোভ-সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে দুই শতাধিক আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি।
বৈঠক বাতিল না করতে ফিলিস্তিনকে মার্কিন হুঁশিয়ারি
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দেয়ার পর, গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে সংঘর্ষে অনেক আহত হয়েছে।
মার্কিন এই ঘোষণার প্রতিবাদে, এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাথে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাতও বাতিল করে দেবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এ প্রেক্ষাপটে বৈঠক বাতিল না করতে ফিলিস্তিনকে সতর্ক করে দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
ওদিকে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকৃতি দেবার পর চারিদিকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আর এরই মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষ।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আহতদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফিলিস্তিনে লোকজন প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এলে পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে ইসরাইল। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের দিক ইট-পাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে।
এদিকে, এসব ঘটনার মধ্যেই ফিলিস্তিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এই মাসের শেষের দিকে সেই অঞ্চলে এক সফরে যাবেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। কিন্তু সেই সময়ে তাকে স্বাগত জানানো হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্যালেস্টাইনের একজন কর্মকর্তা জিব্রি রাজৌব।
কিন্তু নির্ধারিত বৈঠক ফিলিস্তিন যাতে বাতিল না করে সেই মর্মে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে হোয়াইট হাউস বলেছে, এই ধরণের সিদ্ধান্ত বরং আরো উল্টো ফল বয়ে আনবে।
বিতর্কিত নগরী জেরুসালেমকে বুধবারে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস সেখানে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল।ড ট্রাম্প।
তার এই ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ।
এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই স্বীকৃতিকে অসহযোগিতামুলক বলেছে।