রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর আর্মার্ড ট্যাংক ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ইউনিট গত কয়েকদিন ধরে আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। এর মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় মস্কোর সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রাশিয়ার সরকারি সূত্র মতে, তাজিক সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টা জোরদার করতে রাশিয়া সেখানে ভারী সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে।
তাজিকিস্তানে পাঠানো রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের তালিকায় আছে টি-৭২ যুদ্ধ ট্যাংক, বিএমপি-২ পদাতিক বাহিনীর সামরিক যানবাহন, বিটিআর-৮০ সাঁজোয়া যান, এমআই-৪ এ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং ডি-৩০ কামান।
তাজিকিস্তান রুশ নেতৃত্বাধীন মধ্য এশীয় সামরিক সহযোগিতা সংগঠন ‘কালেকটিভ সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন’র একটি সক্রিয় সদস্য।
আইএসের মতো সিরিয়া ও ইরাকে পরাজিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো মধ্য এশীয় দেশগুলো (মূলত আফগানিস্তানে) ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করছে বলে রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে মস্কো সামরিক-কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এর মধ্যেই তাজিকিস্তানে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক শক্তি মোতায়েন এর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে তাজিকিস্তানে একটি বড় আকারের সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করছে রাশিয়া। এখানে সাত হাজার মোটরচালিত রাইফেলধারি সেনা ও তাদের প্রয়োজনী সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের উচিত হবে আফগানিস্তানে তাদের কৌশলগত ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নেয়া। আফগানিস্তানে যুদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তাদেরকে মনোযোগী হতে হবে। স্পুটনিক পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে যখন রাশিয়া ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী বিরোধী অপারেশনকে সমর্থন করেছিল শুধু তখনই যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আমাদের জন্য উপকারী ছিল। কিন্তু এখন তাদের উপস্থিতির কারণে আমাদেরকে ক্রমাগতভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘[পরবর্তীতে] রাশিয়া এই সন্ত্রাসী বিরোধী অপারেশনের সত্যিকার উদ্দেশ্য এবং সন্ত্রাস মোকাবিলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের প্রতি সন্দিহান হয়ে ওঠে। রাশিয়ার সন্দেহই সঠিক। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার কৌশলের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেয়া। যদি তারা ভুল স্বীকার করে তাহলে জনগণকে বলতে পারবে কেন এই ভুল হয়েছে।’
কারজাই বলেন, আফগানিস্তানের শহর ও গ্রামে সাধারণ মানুষের জান-মাল ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার যুদ্ধ মিশন চালিয়ে যাক তা দেশটির জনগণ চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এবং সম্প্রতি সেনাসংখ্যা বাড়ানো নিয়ে কারজাই বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের ক্ষতি না করে সন্ত্রাস মোকাবেলা করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাই। আফগানিস্তান একটি আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার পরিবর্তে সহযোগিতার ক্ষেত্র হওয়া উচিত।’
গত আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনের নতুন আফগান কৌশল ঘোষণা করেন। এতে তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আরো বেশি মার্কিন সেনা পাঠানোর অঙ্গীকার করেন এবং সন্ত্রাসীদের দমন করতে সেনাকর্তৃত্ব আরো প্রসারিত করেন।
দেশটিতে অতিরিক্ত ৪ হাজার সেনা পাঠানোর জন্য আফগানিস্তানের মার্কিন কমান্ডারের অনুরোধও অনুমোদন করেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের হামলার পর থেকে গত প্রায় ১৭ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অথচ নির্বাচনের আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে মার্কিন সেনা ও সম্পদ পাঠানোর নিন্দা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।