
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার অভিযোগে পাঁচ বিদেশিসহ ২৬ জনকে আটকের পর বিদেশি পাঁচজনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অন্যদের মধ্যে ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের ব্যক্তিদের আটক করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ জানান, আটকদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন একজন চায়নিজ ও চারজন যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি দেখাতে পারেননি।
তিনি আরো জানান, অন্যরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তাদের অধিকাংশই মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। তারা এনজিওকর্মীর ছদ্মবেশে শিবিরের ভেতরে ঢুকে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে এক মাস থেকে ছয় মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়। অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান জানান, সোমবার রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ ও সহকারী পুলিশ সুপার চাউলাই মারমার নেতৃত্বে পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালান। তাদের সঙ্গে ছিলেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য।
ইউএনও আরো জানান, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাইরের কারো অনুপ্রবেশ বা অবস্থান করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেউ অবস্থান করছে কি না, সে জন্য অভিযান চালানো হয়।
গত ৩ অক্টোবর কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় ১৫০ জনকে আটক করা হয়। তখন থেকে নিরাপত্তা রক্ষাসহ বিশৃঙ্খলা এড়াতে রোহিঙ্গা শিবিরে বিনা প্রয়োজনে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন।
বন্য হাতি চলাচলের স্থানে একের পর এক গড়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
বন্য হাতি চলাচলের স্থানে একের পর এক গড়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। গেল দুই মাসে বন্য হাতির আক্রমনে ৮ জন নিহত হওয়ায় আতংক দিন দিন বাড়ছে। আর হাতির বিচরণের ক্ষেত্র সংকুচিত হ্ওয়ায় জীব- বৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে তাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলতে হবে।
কক্সবাজারের উখিয়া বাজার থেকে টেকনাফ। এ পথে চলতে ফিরতে কিছুদূর পর পরই দেখা মিলবে বন্য হাতি থেকে সাবধান, নির্দেশনামূলক এমন অনেক সাইনবোর্ড। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বন্য হাতির চলাচলের পথ এবং হাতির চারণভূমির মধ্যেই এখন ঠাঁই মিলেছে নির্যাতিত লাখো মানুষের।
উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালীর এসব জায়গা আগে থেকেই জনবসতি অনেক কম। বন্যপ্রানীর ভয়ে যেখানে আবাস গড়তে চাইতো না অনেকেই। কিন্তু ঘনজঙ্গল উজাড় হওয়ার মধ্য দিয়ে মানবিকতার প্রয়োজনেই এসব স্থানেই রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় মিলেছে। প্রতিনিয়তই হাতির এসব চারণভূমিতে গড়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প আর দেশিয় বা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার অস্থায়ী কার্যালয়।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে বড় সংকটের বিষয় হল- মানুষের নিরাপত্তা। গেল ১৪ ই অক্টোবর বন্য হাতির আক্রমনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। আগের মাসেও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই হাতি আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের।
শরনার্থী ক্যাম্প গড়ে উঠা এলাকাকে হাতির বিচরণভূমি হিসেবে স্বীকার করল, স্থানীয় প্রশাসন। মানবিক দিকতো রয়েছেই জীব বৈচিত্র ও বন্য প্রাণী রক্ষায় চটজলদি রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়াই স্থায়ী সমাধান, মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।