
আজ রোববার অনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির তথ্যানুযায়ী আগামী ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে ভোট। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের লাগানো বিলবোর্ড, বানার, ফেস্টুন, পোস্টার সরানো হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে কদর বেড়েছে সাধারণ ভোটারদের। নগরবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে ভিন্নরকম এক আমেজ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হলে কে হবেন নগরবাসীর আগামীর সেবক, তা নিয়েও চলছে তুমুল আলোচনা।
এবার নিজ দুর্গের নগরভবন জয় করতে মরিয়া জাতীয় পার্র্টি আগাম ঘোষণা করেছে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীর নাম। শনিবার (৪ নভেম্বর) দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র পদে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মনোনয়নপত্র তুলে দেন। জাপা এবার প্রচার প্রচারণাসহ প্রার্থী ঘোষণা এগিয়ে থাকলেও এখনো (রোববার দুপুর পর্যন্ত) নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে।
তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করে পরীক্ষিত প্রার্থীর জন্যই চিন্তাভাবনা করে প্রার্থী ঘোষণায় সময় নিচ্ছেন দেশের রাজনীতির অন্যতম শক্তিধর এই দল দুইটি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তুহিন ওয়াদুদের দাবি, রংপুর সিটিতে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য জন-সম্পৃক্ত, জনপ্রিয়, নিজস্ব ভোট ব্যাংকের অধিকারী ও ভোটের রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেই এগুচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে একডজনেরও বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্য থেকে এখনও কাউকে নির্দিষ্ট করে মনোনয়ন দেয়া না হলেও বর্তমান মেয়র সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। তবে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের জন্য বর্তমান মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, মহানগর সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক রাশেক রহমান চেষ্টা করছেন। এর বাইরে জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ড. জয়নাল আবেদীনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন।
অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি কাওছার জামান বাবলা ও জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু দৌড়ঝাঁপ করছেন। তারা বিলবোর্ড ফেস্টুন, প্রচারণাপত্র ও জনসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে এখানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহম্মেদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম মিজু এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামুর দৃশ্যমান কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে তাদের মনোনয়নের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে গত ১৮ মার্চ রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফারের হাত তুলে ধরে রসিকের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। এরশাদের এ ঘোষণার পর গতবারের পরাজিত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘রসিক নির্বাচনে এরশাদ স্যার আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর রংপুর মহানগর জাপার ৩৩টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে আমার নিজস্ব একটি প্লাটফর্ম আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার আমি লাঙ্গল প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বরে নবগঠিত রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছিল। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু জয়লাভ করেন।