উপমহাদের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে এতদিন আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পরস্পরকে দোষরুপ করতে দেখা গেলেও এবার তাদের একটি পাকিস্তান প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত দূষণের অভিযোগ তুলেছে। শুক্রবার পাকিস্তানের এক অভিযোগে বলা হয়েছে ভারতের পাঞ্জাব ও রাজস্তান রাজ্যের সীমান্তে ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ পোড়ানো ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ধোঁয়া এসে তার ক্ষতি করছে। খবর সাউথ এশিয়ান মনিটরের।
পাকিস্তানের ইংরেজিভাষী ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চল এই শীত মওসুমেও উষ্ণ হয়ে ওঠার জন্য ভারতীয় রাজ্যগুলো থেকে ধেয়ে আসা ধোঁয়া দায়ী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লাহোরের জন্য বিষয়টি সুখকর নয়। পরিবেশ সুরক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন যে স্থানীয় দূষণের কারণে নিঃশ্বাস স্তরে ধোঁয়ার পাতলা স্তর তৈরি হয়। কিন্তু উপরের স্তর ঘন হওয়ার কারণে ভারতীয় পাঞ্জাবে ব্যাপকভাবে ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানো থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া। সেখান থেকে ধোঁয়া ও ছাই পাকিস্তানে প্রবেশ করছে।’
একজন কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের শাহিওয়ালে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ধোঁয়ার নিঃসরণ থেকে বায়ু দূষণ ঘটলেও গত চার দিন ধরে ভারতীয় পাঞ্জাবের চারটি ও রাজেস্তানের নয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধোঁয়াশা সৃষ্টির একটি বড় কারণ ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ পোড়ানো। এ নিয়ে জনগণের হৈ চৈ ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বহুদিন ধরে চলে আসা রীতিটিকে কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
ভারতীয় পাঞ্জাবে ২৪ ঘন্টায় ২,৬২০টি স্থানে ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানোর ঘটনা উপগ্রহে ধরা পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়ে মাত্র ২৭টি।
ভাওয়ালপুর, মুলতান, ওকারা, পাকপাত্তান, চিনিঅট ও ফয়সালাবাদে এই ধোঁয়াশা সবচেয়ে ঘন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গতবছরও পাকিস্তানের পাঞ্জাবে এই ধোঁয়াশা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। এতে চোখ ও গলায় জ্বালাপোড়া এবং শ্বাস প্রশ্বাস সমস্যা তৈরি হয়। এই সমস্যা কাটানোর একমাত্র উপায় বৃষ্টি। কিন্তু আগামী কয়েক দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এর কোন সম্ভাবনা নেই।
ভারতীয় গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
এর আগে পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশকারী একটি ভারতীয় গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাক সেনাবাহিনী। ড্রোনটি সেখানে গুপ্তচরগিরির কাজে পাঠানো হয় বলে সেনাবাহিনী দাবি করে। আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের (পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত) পুঞ্চ ও হাভেলি জেলার রাখচিকরি সেক্টরে এই ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, শুক্রবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আকাশে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর সময় ভারতীয় পাইলটবিহীন বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়।
তিনি আরো দাবি করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ড্রোনটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছে।
এর আগে একইদিন পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিং থেকে বলা হয় যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তিতে দিল্লির কাছে ড্রোন বিক্রি মেনে নেবে না ইসলামাবাদ।
পররাষ্ট্রদফতরের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেন, ওই চুক্তির কারণে এই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হবে। ভারতের কাছে স্পর্শকাতর সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করার মানে হবে দেশটির ‘অপতৎপরতাকে’ উষ্কে দেয়া।
অতীতেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী কাশ্মীরে ড্রোন ভূপাতিত করা দাবি করে। গতবছর নভেম্বরে এই রাখচিকরি সেক্টরেই আরেকটি কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করে সেনাবাহিনী। ওই ড্রোনটিকেও গুপ্তচরগিরির জন্য পাঠানো হয় বলে দাবি করা হয়।
একইভাবে, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান সেনবাহিনী দেখতে একই রকম আরেকটি কোয়াডকপ্টার আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের ভিমবার জেলায় গুলি করে ভূপাতিত করে।
ওই বছরের মে মাসে, ভারতের পাঠানকোট এলাকা থেকে সীমান্ত পারি দিয়ে আসা একটি কবুতর আটক করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কবুতরটি গোয়েন্দাগিরির কাজ করছিলো বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়।
ভারত অবশ্য এখনো পাকিস্তানের এ দাবির ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
কাশ্মীরের একাংশ ভারত এবং একাংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু দু’দেশই গোটা কাশ্মীরের ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করে।