1. arifcom24@gmail.com : Arif Uddin : Arif Uddin
  2. admin@khoborbari24.com : arifulweb :
  3. editor@khoborbari24.com : editor : Musfiqur Rahman
  4. hostinger@khoborbari24.com : Hostinger Transfer : Hostinger Transfer
  5. khoborbari@khoborbari24.com : Khoborbari : Khoborbari
  6. khobor@gmail.com : :
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনামঃ
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নিশাত এ্যঞ্জেলা বদলী : নতুন পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম ফুলছড়িতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুইজন আটক পোশাকের রং বদলায়, কিন্তু বদলায় কি পুলিশের আচরণ? গাইবান্ধায় এনসিপির মনোনয়ন ফরম তুলেছেন যারা পলাশবাড়ী পৌর জামায়াতের নির্বাচনী মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত পলাশবাড়ী উপজেলা জাতীয়তাবাদী তারেক জিয়ার প্রজন্ম দলের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন রাজশাহীতে বিচারকপুত্র হত্যার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় মানববন্ধন গাইবান্ধায় বিএনপির প্রার্থীকে বিজয়ী করতে জাসাসের মতবিনিময় সভা আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসব মুখর করতে মাঠ প্রশাসন প্রস্তুত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি-বহির্ভূত ৫৭টি আদেশে ডিপিসি স্থবির—১২ বছরেও প্রথম পদোন্নতি পাচ্ছেন না বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকরা।

বন্দীদশা থেকে যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসলেন জিয়াউর রহমান

  • আপডেট হয়েছে : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর। অস্থির এক সময় পার করছিল বাংলাদেশ। অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থানের আশংকায় দিন যাপন করছিলেন রাজনীতিবিদ এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা তখন গুঞ্জন আর গুজবের নগরী। সেনানিবাসের ভেতরে এক চাপা উত্তেজনা ভর করেছে সবার মাঝে। ৬ই নভেম্বর সন্ধ্যার সময় ঢাকা সেনানিবাসে কিছু লিফলেট বিতরণ করা হয়। খবর বিবিসির।

সে লিফলেট যারা পেয়েছিলেন তারা আঁচ করতে পারছিলেন যে রাতে ‘কিছু একটা’ ঘটতে যাচ্ছে। ঢাকা সেনানিবাসে তখন মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ একটি লিফলেট তার হাতে পৗঁছায়। সে লিফলেটে সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যার ইংগিত ছিল পরিষ্কার।

মুহাম্ম ইব্রাহিম সে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন এভাবে, ‘সে লিফলেটে লেখা ছিল , সৈনিক-সৈনিক ভাই-ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই। এ থেকে আমি বুঝলাম রাতে কিছু একটা হবেই হবে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমত নিজেকে বেঁচে থাকতে হবে, দ্বিতীয়ত: সেনাবাহিনীকে বাঁচাতে হবে।’

রাত ১২টা বাজতেই গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ঢাকা সেনানিবাস। ব্যারাক ছেড়ে সৈন্যরা দলে-দলে ক্যান্টমেন্টের ভেতরে রাস্তায় নেমে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সেনানিবাসের ভেতরে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। গুলির তীব্রতা এতোই বেশি ছিল যে কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছিল না।

‘আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এ তীব্র গোলাগুলির মধ্যেই আমাকে আমার ব্যাটালিয়নে পৌঁছতে হবে। চতুর্দিক থেকে গোলাগুলি হচ্ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোনদিক থেকে গুলি আসছে,’ বলেন মহাম্মদ ইব্রাহিম। এর আগে ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তখনকার সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দী খালেদ মোশারফ সেনা প্রধান হন।

মূলত তার পর থেকেই পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা জোরদার হতে থাকে। সাতই নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানের প্রাণ পুরুষ ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া কর্নেল মো: আবু তাহের। সাথে ছিল বামপন্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ।

সে সময় কর্নেল তাহেরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন, যিনি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের সে সময়টিতে আনোয়ার হোসেন ঢাকায় জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। আনোয়ার হোসেনের বর্ণনায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চিন্তা ছিল তাদের।

এক সাক্ষাতকারে আনোয়ার হোসেন জানান, ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ৬ই নভেম্বর রাত পর্যন্ত অসংখ্য সভা হয়েছে। মূলত, সেনাবাহিনীর সৈনিকদের সাথে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সেসব সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সৈন্যরা একটি ১২ দফা দাবী প্রস্তুত করে। তাদের লক্ষ্য ছিল খালেদ মোশারফকে পদচ্যুত করা।

৭ই নভেম্বরে পাল্টা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছিল?
আনোয়ার হোসেনের সে বর্ণনায়, ‘কর্নেল তাহের পরিকল্পনা করেছিলেন অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সৈন্যরা অস্ত্র হাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তিনি সৈন্যদের বলেছিলেন প্রত্যেকে কয়েকটি অস্ত্র হাতে বেরিয়ে আসবে। আর বাইরে অপেক্ষমাণ আমাদের শ্রমিক ও ছাত্ররা সশস্ত্র হবে। এভাবেই সৈনিক জনতার অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন কর্নেল তাহের। আমাদের লক্ষ্য ছিল অভ্যুত্থানের পর একটি বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল হবে, রাজবন্দীদের মুক্ত করা হবে এবং দেশে একটা সাধারণ নির্বাচন দেয়া হবে।’

সে সশস্ত্র পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। কর্নেল তাহেরের পরিকল্পনায় এবং জাসদের সম্পৃক্ততায় সে অভ্যুত্থান না হলে জিয়াউর রহমানের ভাগ্যে কী ঘটতো সেটি বলা মুশকিল।

জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পেছনে জাসদ এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কিছু রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছিল। তারা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তাদের পাশে চেয়েছিলেন। জাসদ মনে করতো তখনকার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অনেকের মাঝে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের একটি পরিচিত ছিল। সেজন্য কর্নেল তাহের এবং জাসদ ভেবেছিল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে তাদের পাশে আনতে পারলে সেটি ইতিবাচক ফল দেবে।

‘জিয়াউর রহমানকে যখন বন্দি করা হয় তখন তিনি কর্নেল তাহেরকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন যেন তাকে উদ্ধার করা হয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে কর্নেল তাহের এবং জিয়াউর রহমান পরস্পরকে জানতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান শীর্ষ সেনানায়ক ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তিনি একটি স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। সে কারণে তার পরিচিত বেশি ছিল। কর্নেল তাহের ভেবেছিলেন জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হলে তিনি আমাদের পাশে থাকবেন।’ বলেন আনোয়ার হোসেন।

কিন্তু জিয়াউর রহমান মুক্ত হবার পর পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। যে জিয়াউর রহমানকে পাশে পাবার আশায় ছিলেন কর্নেল তাহের, সে জিয়াউর রহমান মুক্ত হয়ে ভিন্ন ইংগিত দিলেন। দৃশ্যপটের সামনে চলে আসেন জিয়াউর রহমান এবং আড়ালে যেতে থাকেন কর্নেল তাহের।

জিয়াউর রহমানের সে আচরণকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে মনে করে জাসদ।

৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থান কর্নেল তাহেরের নামে পরিচালিত হলেও তার কোন বক্তব্য বা ভাষণ রেডিও -টিভিতে প্রচার হয়নি। সে কারণে জিয়াউর রহমান সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি পরিচিত হয়ে উঠেন। সেসব সৈন্য জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যাচ্ছিল তাদের কাছে কর্নেল তাহেরের নির্দেশনা ছিল যে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে যেন ঢাকার এলিফেন্ট রোডে কর্নেল তাহেরের বাসায় নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পর তাকে সাথে না নিয়ে সৈন্যরা গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে এলিফেন্ট রোডে ফিরে আসে। জিয়াউর রহমানকে না দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন কর্নেল তাহের। তার মনে পাল্টা আশংকা তৈরি হয়।

আনোয়ার হোসেনের বর্ণনা করেন, ‘সৈন্যরা যখন ট্রাকে করে শূন্যে গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে আমাদের বাসার সামনে এলো, তখন কর্নেল তাহের প্রশ্ন করলেন, হোয়ার ইজ জিয়া (জিয়া কোথায়)? সৈন্যরা তখন বললো- স্যার তিনি বলেছেন আপনাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

তখন কর্নেল তাহের বলেন, আওয়ার আপরাইজিং প্ল্যান ইজ লস্ট। ( আমাদের বিপ্লবের পরিকল্পনা হারিয়ে গেছে।)

কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে থাকা তখনকার মেজর সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম মনে করেন, পরিস্থিতির কারণে জিয়াউর রহমানের পক্ষে কর্নেল তাহেরের কাছে যাওয়া সম্ভব ছিল না। মুক্ত হবার পর জিয়াউর রহমান ২য় ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি অফিসে গিয়ে অবস্থান নিলেন। ভোর ছয়টার পর সেখানে উপস্থিত হন মি: ইব্রাহিম।
মি: ইব্রাহিম বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে শুনছিলাম যে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শহরে নিয়ে যাওয়া হবে, রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে। উনি যেতে চাচ্ছেন না। একই সাথে সৈনিকরা চিল্লাচ্ছে – বাইরে যাওয়া যাবেনা, বাইরে যাওয়া যাবেনা।’

কর্নেল তাহেরের কাছে যাওয়া উচিত হবে কী-না সে বিষয়টি নিয়ে জিয়াউর রহমানের মনে বেশ দ্বিধা ছিল। মুহাম্মদ ইব্রাহিমের ভাষ্য অনুযায়ী উপস্থিত সেনা অফিসারদের পরামর্শ গ্রহণ করে জিয়াউর রহমান শেষ পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্টের বাইরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

অভ্যুত্থানের রাতে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু অফিসারকে হত্যা করা হয়। এ পরিস্থিতির জন্য কর্নেল তাহেরর নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এবং জাসদকে দায়ী করেন মুহাম্মদ ইব্রাহীম।

৭ই নভেম্বর প্রথম প্রহরে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হলেও বেলা ১১টার দিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফকে তার দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা এবং লে. কর্নেল এটিএম হায়দারসহ হত্যা করা হয়। খালেদ মোশারফ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ একটি বইতে তুলে ধরেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন যিনি পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন।

সে বইটির নাম ‘বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১’।

সে বই থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো, ‘৭ই নভেম্বর রাত বারোটার পর ঢাকা সেনানিবাস থেকে যখন সিপাহী বিপ্লবের সূচনা হয়, তখন খালেদ মোশারফ ও অন্যান্যরা বঙ্গভবনেই ছিলেন। এসব সংবাদ শুনে খালেদ মোশারফ কর্নেল হুদার মাধ্যমে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নওয়াজেশের সাথে যোগাযোগ করলে নওয়াজেশের ইউনিটে তাদের আসার জন্য বলে। কিন্তু সেটা পরে রটে যায় যে তারা আরিচা হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে একটি বেসামরিক গাড়িতে যাওয়ার পথে আসাদ গেটের নিকট তাদের গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে তারা নিকটস্থ একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাপড় বদলিয়ে ১০ ইস্ট বেঙ্গলের দিকে হেটে অধিনায়কের অফিসে পৌঁছে। ভোরের দিকে জিয়াউর রহমান খালেদ মোশারফের অবস্থান জানার পর তার সাথে কথা বলেন এবং দু’জনের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে জিয়াউর রহমান নওয়াজেশকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ কথা মরহুম নওয়াজেশ নিজেই আমাকে বলেছিলেন। নওয়াজেশ সকালে তাদের জন্য নাশতার বন্দোবস্ত করে এবং তার বর্ণনা মতে এ সময় খালেদ মোশারফ অত্যন্ত স্বাভাবিক ও শান্ত ছিলেন। তবে কর্নেল হুদা এবং হায়দার কিছুটা শঙ্কিত হয়ে উঠলে খালেদ মোশারফ তাদেরকে স্বাভাবিক সুরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলেন। ইতোমধ্যে সেনানিবাস থেকে কিছু বিপ্লবী সৈনিক ১০ ইস্ট বেঙ্গলের লাইনে এসে সেখানকার সৈনিকদের বিপ্লবের স্বপক্ষে উত্তেজিত করতে থাকে এবং খালেদ মোশারফ ও তার সহযোগীদের হস্তান্তরের জন্য অধিনায়কের উপর চাপ প্রয়োগ করেতে থাকে। ন্ওয়াজেশ উত্তেজিত সৈনিকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এর কিছুক্ষণ পরে কিছু সংখ্যক সৈনিক অধিনায়কের অফিসের দরজা এক প্রকার ভেঙ্গে তিনজনকেই বাইরে মাঠে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করে।’

মূলত ৩রা নভেম্বর থেকেই সেনাবাহিনীতে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল।

তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন মাহবুবুর রহমান যিনি পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতা।

জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে জাসদ যে ব্যাখ্যাই তুলে ধরুক না কেন, তিনি যে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই বলে মনে করে মাহবুবুর রহমান।

৭ই নভেম্বরের কয়েকদিন পরে জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।

অনুষ্ঠানস্থলে তিনি উপস্থিত হবার সাথে সাথে একদল সৈনিক ‘জিয়া ভাই-জিয়া ভাই’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে।
তখন জিয়াউর রহমান তাদের ধমক দিয়ে বলেন তাকে ‘ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করা যাবেনা । সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘স্যার’ হিসেবে সম্বোধন করতে হবে।

জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, সে পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে কমান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াউর রহমানের এ ধরনের অবস্থান নেয়া বেশ কঠিন এবং বিপদজনক ছিল। কারণ সৈনিকরা তখন বিশৃঙ্খল।

কেউ কারো নির্দেশনা মানছে না। কে ঊর্ধ্বতন আর কে অধস্তন সে বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি জিয়াউর রহমানের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।

মাহবুবুর রহমানের বর্ণনায়, ‘জিয়াউর রহমান উল্কার মতো বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে ছুটে চলেছেন। সেখানে সৈনিকরা কেউ অস্ত্র জমা দেয়না । কেউ ক্যান্টনম্যান্টে আসে না। কেউ কাউকে মানে না। কিন্তু একেকটা জায়গায় গিয়ে তিনি কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

জেনারেল জিয়া পরিস্থিতি যতই তার নিয়ন্ত্রণে আনতে থাকেন ততই দূরে সরে যান কর্নেল তাহের।
৭ই নভেম্বরের পর দু’সপ্তাহের মধ্যেই জিয়াউর রহমান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
তখন থেকেই জিয়াউর রহমানের ইশারাতেই রাষ্ট্র ক্ষমতা আবর্তিত হচ্ছিল। তখনই কর্নেল তাহেরের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়।

যে কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন, সে কর্নেল তাহেরকে কেন বিচারের আওতায় আনলেন জিয়াউর রহমান? এনিয়ে নানা ব্যাখ্যা আছে।

জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন তখনকার সেনাবাহিনীতে অফিসাররা চেয়েছিলেন কর্নেল তাহেরর বিচার হোক।
সামরিক অফিসারদের এ দাবী জিয়াউর রহমানের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন তিনি।
কর্নেল তাহেরকে বিচারের আওতায় না আনলে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো ‘ধ্বংস’ হয়ে যাবে বলে অনেক কর্মকর্তা মনে করতেন।

তাছাড়া কর্নেল তাহেরর দিক থেকে আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকাও করছিলেন কেউ কেউ।
সে প্রেক্ষাপটে গোপন সামরিক কারাগারে এক বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়।

কিন্তু কর্নেল তাহেরের পরিবারের পক্ষ থেকে এক রিট আবেদনের পর ২০১১ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট সে বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করে।

৭ই নভেম্বরকে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ভিন্ন-ভিন্ন নামে পালন করে।
বিএনপি’র মতে এটি ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ আওয়ামী লীগ মনে করে এটি ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আরো কিছু ঘটনার মতো ৭ই নভেম্বরও একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে রয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এরকম আরও খবর
© All rights reserved © 2025

কারিগরি সহযোগিতায় Pigeon Soft