
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বখাটে এক মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪র্থ শ্রেণিতে পড়–য়া ওই ছাত্রী শিক্ষকের ভয়ে এক মাস ধরে মাদ্রাসা যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে।
মাদ্রাসার সুপার ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। নির্যাতিত অসহায় পরিবারটি বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরবোয়ালমারী হাফিজাবাদ দাখিল মাদ্রাসার ঘটনা এটি। আজ রবিবার সরেজমিনে নির্যাতিত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে ওই সব অভিযোগ জানা গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, মাদ্রাসার শিক্ষক কারী নুর মোহাম্মদ মাঝে মাঝে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করে। ক্লাশেই ছাত্রীর শরীরে ও বুকে হাত দেয়। এর এক পর্যায়ে গত ৩ অক্টোবর ক্লাশে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীর বুক চেপে ধরে ওই শিক্ষক।
এ সময় শিশুটি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে ভয়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত হয় না সে। এ ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থী অভিভাবকরা মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করে। অবস্থা বেগতিক দেখে মাদ্রাসার সুপার ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু এক মাস পার হলেও তদন্ত কমিটি কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।
চরবোয়ালমারী গ্রামের দরিদ্র শুকুর আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন করল কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার কেউ করল না। মাদ্রাসার সুপার ও পরিচালনা কমিটির কাছে অভিযোগ দিলাম। তারা কইল বিচার হইব। একমাস পার হলো বিচার আর হইলো না। মাইনসে কয় অভিযুক্ত শিক্ষক সবাইকে টাকা খাওয়াইছে। তোমার বিচার কেউ করব না। আমি গরীব মানুষ থানা পুলিশও চিনি না। ওরা টাকা ওয়ালা। সবাইকে টাকা দিয়া মুখ বন্ধ কইরা দিছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকের ভয়ে মেয়ে আমার মাদ্রাসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওই মাদ্রাসা আর পড়বে না। পরে স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা কইছে। তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরবোয়ালমারী গ্রামের এক অভিভাবক বলেন, ‘কারী নুর মোহাম্মদ একজন লম্পট। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির বিচার হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্রীদের নানা ভাবে যৌন নির্যাতন করে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক কারী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি ছাত্রীদের সঙ্গে কোনো খারাব অচরণ করিনি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনাকে কে বলেছে টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করেছি।’
এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক শোকজ করা হয়েছে। প্রথম শোকজের জবাব দেয়নি পরে আবার পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া আমি একজন শিক্ষককে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম করেছি। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তারা দেয়নি। সবাই টালবাহানা করছে। আমি একা কি করতে পারি।’