
দিনাজপুরে গত দেড় মাসে পুলিশ সুপার মো.হামিদুল আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মটরসাইকেল চুরির বিভিন্ন সিন্ডিকেটের ৫০ জন আটক । চুরি হওয়া ১০৫ টি মটরসাইকেল পুলিশ কতৃক উদ্ধার। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় মটরসাইকেল চুরি ও বিক্রয়ে একশ ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। পুলিশ, এলাকাবাসী ও চুরি যাওয়া মটরসাইকেলের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মটরসাইকেল চুরি থেকে বিক্রয় পর্যন্ত দিনাজপুর ও পাশ্ববর্তী জেলা গুলোতে ৩ সিন্ডিকেট রয়েছে। একটি সিন্ডিকেটে রয়েছে চোর। একটি সিন্ডিকেটে রয়েছে জাল কাগজপত্র তৈরী, আর এক সিন্ডিকেটে রয়েছে চোরাই মটরসাইকেল ক্রেতা ও বিক্রেতা।
দিনাজপুর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, চুরির সিন্ডিকেট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি সিন্ডিকেট দিনে চুরি করে আরেকটি সিন্ডিকেট রাতে চুরি করে। দিনে মটরসাইকেল চুরির সিন্ডিকেটে রয়েছে ৪০ থেকে ৫০ জন। দিনাজপুর গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী দিনে মটরসাইকেল চুরির মূল হোতারা বীরগঞ্জের ফেরদৌস, দিনাজপুর শহরের রামনগরের দুই ভাই সৌরভ রায় ও রনি রায়, বালুয়াডাঙ্গার জিল্লুর রহমান ওরফে জনি এবং নিউটাউনের ইমতিয়াজ হায়দার ওরফে টিপু ।
এ দিকে ফুলবাড়ীতে নতুন গাড়ি চোরের হোতা মো. তহিদুল ইসলাম এর নিকট থেকে ডিবি পুলিশ বেশ কিছু চোরাই গাড়ি উদ্ধার করেন এবং তার বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ মামলা দায়ের করেছেন বলে জানাযায়। রাতে মটরসাইকেল চুরির সিন্ডিকেটে রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ জন। সিন্ডিকেটের মূল হোতারা খানসামার জাকির হোসেন ওরফে হৃদয়, বীরগঞ্জের তিন ভাই কামাল, জামাল ও জালাল, বোঁচাগঞ্জের দুই ভাই জুয়েল ও গাঙ্গুয়া, দিনাজপুর শহরের ষ্টাফ কোয়ার্টারের মিঠুন ও আরমান, রাজবাড়ির সবুজ এবং বাহদুর বাজারের রাব্বী।
চোরাই মটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়ের সিন্ডিকেটে রয়েছে পনের জন। এদের মধ্যে মূল হোতা নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার মমতাজ এবং শাহজাহান মেকার, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার রেজাউল করিম, ফুলবাড়ী উপজেলার মঞ্জুরুল ইসলাম, হাকিমপুর উপজেলার সাজ্জাদ, খট্টামাধপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ, বোয়ালদাড়ের ফারুক এবং রিকাবী গ্রামের সরোয়ার। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খালাসপীরের ভেজালু, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার আশরাফ ও আসাদ। জাল কাগপত্র তৈরীর মূল হোতা হিলির সাধান ও শাহীন। চোরই গাড়ির চেসিস এবং ইঞ্জিন নাম্বার পরিবর্তনের মূল হোতা হিলির সাজ্জাদ, নুরুজ্জামান তোতা এবং দিনাজপুর শহরের সুইহারির কনক চন্দ্র রায়। এস আই শরিফুল ইসলাম আরো জানান, মূলত একটি মটরসাইকেল চুরির পর চোরেরা চোরাই মটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের কাছে নিয়ে যায়।
সেই সিন্ডিকেট জাল কাগপত্র তৈরীর জন্য হিলির সাধান ও শাহীনের কাছে এবং চোরই গাড়ির চেসিস এবং ইঞ্জিন নাম্বার পরিবর্তনের জন্য হিলির সাজ্জাদ, নুরুজ্জামান তোতা এবং দিনাজপুর শহরের সুইহারির কনক চন্দ্র রায়ের কাছে নিয়ে যায়। এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, অনুসন্ধানে দেখা গেছে চোরাই মটরসাইকেলে ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অধিনে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায়সহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক বিশ্বত কিছু বিক্রয়কারি রয়েছে। তবে ওই বিক্রয়কারিরা কখনই মটরসাইকেল চোরের সিন্ডিকের পরিচয় সম্পর্কে অবগত থাকেন না।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দর রউফের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর এক নিকট আত্মীয় জানিয়েছেন আব্দুর রউফ আগে মটরসাইকেল চোরাই ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। এখন নেই। দিনাজপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, তিনি নিজেই এর দায়িত্ব নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে সতের সদস্যের একটি টিম করে প্রযুক্তি এবং ফাঁদ পেতে অভিযান শুরু করে সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করেন। বর্তমানে মটরসাইকেল চুরি শূন্যের কোটায় এসেছে।