জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির প্রধানের পদ থেকে রবার্ট মুগাবেকে বরখাস্ত করেছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। মুগাবের বদলে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগাগওয়াকে দলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রবিবার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বিশেষ বৈঠকে মুগাবেকে বহিষ্কার করা হয়। দৃশ্যত সামরিক অভ্যুত্থানের চার দিন পর দলটির পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো।
৯৩ বছর বয়সী মুগাবেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি দলটি মুগাবের স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকেও তার পদ থেকে অপসারণ করেছে। গ্রেস মুগাবে দলটির মহিলা লীগের প্রধানে দায়িত্বে ছিলেন। তারা মিসেস মুগাবের বিরুদ্ধে ‘উচ্ছৃঙ্খল এবং ধূর্ত’ আচরণের অভিযোগ আনেন।
এদিকে রবিবার দেশটির সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে মুগাবের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী ‘জেডটিভি’ এই তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা জিম্বাবুয়েতে একটি ‘নতুন যুগের’ জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট ইয়ান খামা বলেছেন যে এই অঞ্চলে মুগাবের কোনো ধরনের কূটনৈতিক সমর্থন নেই এবং এখনই তার পদত্যাগ করা উচিৎ।
এর আগে, মুগাবের ভাতিজা জোর গলায় জানান যে তার চাচা এবং তার স্ত্রী গ্রেসকে ‘দেশের জন্য মরতে প্রস্তুত আছেন’ এবং তার পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গোপন অবস্থান থেকে মুগাবের ভাতিজা প্যাট্রিক ঝুওয়াও রয়টার্সকে জানান, বুধবার সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে তার চাচা কদাচিৎ ঘুমাতে পেরেছেন।
তিনি আরো জানান, মুগাবের স্বাস্থ্যের অবস্থা ‘ভাল’ আছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করার বিষয়টি বৈধতা পাবে না বলেও তিনি জানান।
এদিকে, মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে হারারে ও বুলায়ের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এসেছেন।
বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আকঁড়ে থাকা মুগাবেকে এবার সরে যেতে হবে। বিভিন্ন পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের স্থানীয় সংবাদদাতার বরাত দিয়ে জানায়, আন্দোলনকারীরা সেনা সদস্যদের জড়িয়ে ধরে উল্লাস করছেন। এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মুগাবের আর ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ নেই। এমনকি দেশটির সাবেক সেনা সদস্যরাও মনে করছে মুগাবের পদত্যাগ করা উচিত। যদিও গত বছরও তারা মুগাবের পক্ষে ছিলেন।
মিছিলে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি জানান, জিম্বাবুয়ের নাগরিক হিসেবে এমন শান্তিপূর্ণ হস্তক্ষেপের জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন মুগাবেকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। আমরা তার আবার ফিরে আসা দেখতে চাই না। আমাদের কাছে এটা একনায়কতন্ত্র শাসনের অবসান। এখন আমরা আমাদের জিম্বাবুয়ে ফিরে পেতে যাচ্ছি।
মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে মিছিলে তার নিজের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দল ও সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে। লন্ডনে জানু-পিএফ দলের প্রতিনিধি নিক মাংগওয়ানা বিসিসি রেডিও ফোরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মুগাবের বাড়ির সামনে তার দলের আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছে। তারা পদত্যাগপত্র ছাড়া সেখান থেকে যাবে না। এটা ২০ মিনিটেই সম্ভব ছিল। লোকজন আসবে, তিনি পদত্যাগ করবেন আর মানুষ চলে যাবে। ঘটনা শেষ।’
এর আগে গত বুধবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রেসিডেন্ট মুগাবে গৃহবন্দি ছিলেন। এরপর শুক্রবার তাকে প্রথম জনসম্মুখে দেখা যায়। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যালেন্সর হিসেবে সমাবর্তনে বক্তব্য দেন। এ সময় তার স্ত্রী গ্রেস উপস্থিত ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার জানা গেছে, তিনি মুগাবের সঙ্গে তার বাড়িতেই আছেন।
দেশটিতে প্রেসিডেন্ট মুগাবের উত্তরাধিকারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে সেনাবাহিনী এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্ত্রী গ্রেসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে মুগাবে গত সপ্তাহে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগাগওয়াকে বহিষ্কার করেন।
১৯৮০ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মুগাবে দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সূত্র: স্কাই নিউজ