ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় সরকার সমর্থিত আওয়ামী পন্থি নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে মারামারি ও ব্যাপক হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান উপাচার্য পন্থি শিক্ষকরা সাবেক উপাচার্য পন্থি শিক্ষক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনকে মারপিট করে গুরুতর আহত করেছেন। এসময় তাকে লাথি ও কিলঘুষি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
জামাল উদ্দিনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপাচার্যের বাসভবনে নিয়ে যান আজিজসহ কয়েকজন শিক্ষক। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসক এনে জামাল উদ্দিনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তিনি রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরেন।
এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটলেও গভীর রাত পর্যন্ত এ নিয়ে দু’পক্ষে উত্তেজনা চলছিল। উপাচার্য গভীর রাত পর্যন্ত দেন দরবার করেও বিষয়টির কোনো সমঝোতায় পৌছাতে পারেননি বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং নীল দলের আহ্বায়ক কমিটিসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ওই বৈঠকের আহ্বান করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় পূর্ব নির্ধারিত সভায় অংশ নেন সরকার সমর্থিত আওয়ামী পন্থি নীল দলের শিক্ষকরা। সভার শুরু থেকেই বর্তমান উপাচার্য ও সাবেক উপাচার্য পন্থি শিক্ষকরা পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখছিলেন।
এক পর্যায়ে জামাল উদ্দিন বক্তব্যে সাবেক উপাচার্য সম্পর্কে তার আগের বক্তাদের কটাক্ষমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রক্টর গোলাম রব্বানী আরেফিন সিদ্দিক ও জামাল উদ্দিনকে নিয়ে তিরস্কার করেন। জামাল উদ্দিন তার প্রতিবাদ করলে দুপক্ষে মারামারি শুরু হয়ে যায়।
প্রক্টরের সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শাহ মো. মাসুম অধ্যাপক জামালউদ্দিনকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ তার। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে যোগ দেন রসায়ন বিভাগের শাহ মুহাম্মদ মাসুম। মাসুম তাকে ঘুষি মারেন, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন।
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, বক্তব্যে প্রক্টর আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছিল। এ সময় আমি প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে আঘাত করেন। এরপর শাহ মাসুম এবং সীতেশ চন্দ্র বাছার আমাকে কিলঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। মাসুম চেয়ার নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে। ঘুষির ফলে আমার নাক দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে তিন থেকে চার শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
মারামারি সময় নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমদসহ অন্যরা তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
অধ্যাপক আবদুল আজিজসহ উপস্থিত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর আচরণের সমালোচনা করেন এবং তদন্ত করে বিচারের দাবি করেন। একদিনের মধ্যে প্রক্টর পদত্যাগ না করলে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়।
নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেন: আমার ৬৩ বছরের জীবনে এমন ঘটনা কখনও দেখিনি। একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের উপর হামলা করতে পারে, এমনটা কল্পনার বাইরে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, বিব্রত এবং শঙ্কিত। উপাচার্য এই ঘটনাকে ওনার নিজের উপর হামলা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি। যদি প্রক্টর পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা আন্দোলনে যাবো’।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে একেএম গোলাম রাব্বানি বলেন, আমি কারও গায়ে হাত তুলিনি। অধ্যাপক জামালই প্রথমে আমাকে ধাক্কা দেয়। পরে অন্য শিক্ষকরা তাকে থামাতে এগিয়ে আসলে তিনি আহত হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৭ মে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে একই ধরণের সাধারণ সভা পণ্ড হয়ে গিয়েছিলো। ওই সভায় শিক্ষকদের মধ্যে দফায় দফায় হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছিলো।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী ৬, ১৩ ও ২০ জানুয়ারি তিন ধাপে ঢাকার তিনটি কেন্দ্র ও সারা দেশের ৪২টি কেন্দ্রে এ নির্বাচন হবে। ফল প্রকাশ করা হবে ২১ জানুয়ারি।