জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসান চেয়ে সোমবার বেশকিছু প্রস্তাব সহকারে একটি বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে মায়ানমার সরকারের প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতা ও জাতিগত নিধন বন্ধের জোরালো দাবি তোলা হয়েছে।
একইসাথে আগাস্ট মাসে নতুন করে সহিংসতার ফলে ছয়লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়ায় তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এদের ফিরিয়ে নেবার আহ্বান উঠে এসেছে বিবৃতিতে। খবর বিবিসির।
এই বিবৃতিতে চীনেরও সম্মতি আদায় করা গেছে। যদিও মায়ানমার কে নানা বিষয়ে সমর্থন দিয়ে আসা চীন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ভেটো প্রদানের অবস্থান থেকে এখনো সরে আসেনি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে এছাড়া জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে মায়ানমারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিয় গুটেরেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, একজন বিশেষ উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য, যিনি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মহাসচিবের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করবেন। জাতিসংঘে ব্রিটেনের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জোনাথন অ্যালেন বলেছেন , মায়ানমার এখন কি ধরেনের কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাই তারা পর্যবেক্ষণ করবেন।
চলতি সপ্তাহেই জাতিসংঘ মহাসচিব দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেবেন আর সেখানেও আলোচনার প্রধান ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু। এদিকে মায়ানমারে নির্যাতন হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের দাবি তুলেছে মানবাধিকার গ্রুপগুলো।
রোহিঙ্গাদের কারণে আগামী বাজেটে তেমন কোনো চাপ পড়বে না: মুহিত
এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে আগামী বাজেটে তেমন কোনো চাপ পড়বে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা দেশের অর্থনীতিতে যে ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল ততটা হচ্ছে না।
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে এডিবির এশিয়া অঞ্চল বিষয়ক মহাপরিচালক হুন কিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে রোহিঙ্গা বিষয়েও কথা হয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জাতীয় বাজেটে কোনো চাপ ফেলবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘তেমন একটা প্রভাব ফেলছে না। শুরুতে ভেবেছিলাম তারা আমাদের বাজেট তছনছ করে দেবে। কিন্তু এখন বলা যায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না।’
কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো সহায়তা করছে। তাই আমাদের খুব বেশি চাপ পোহাতে হচ্ছে না।’
মুহিত বলেন, ‘তবে সেখানে আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তাদের কিছু চাহিদার বিষয়ে তারা জানাচ্ছে। আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা করছি। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি নয়।’
মন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবির কাছ থেকে অর্থ পেতে প্রকল্প তৈরি করছে সরকার। এ লক্ষ্যে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে সেটিও এস্টিমেট করা হচ্ছে। অর্থসচিবকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি ১০/১৫ দিনের মধ্যে হিসাব দেবেন।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এডিবির দক্ষিণ এশীয় মহাপরিচালকের বৈঠকে বাংলাদেশকে আগামী পাঁচ বছরে আট বিলিয়ন ঋণ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার বিষয়টিও উঠে আসে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চাইলে এডিবি রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা তহবিল দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানান হুন কিম। পরে তিনি সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে অবহিত করেন।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য এডিবির কাছে সহায়তা চাইবো। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এর আগে আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছেও সহায়তা চেয়েছি। এজন্য প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্প তৈরি করছে। তবে আমরা ধীরগতিতে এগুচ্ছি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কী অগ্রগতি হয় তা পর্যবেক্ষণ করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’