
অবশেষে হোয়াইটওয়াশও এড়াতে পারলো না বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৬৯ রানে অলাউট হয়েছে টাইগাররা। ১১ ওভার হাতে রেখে ২০০ রানের লজ্জার হার হেরেছে টাইগাররা।
প্রোটিয়ানদের দেওয়া ৩৭০ রানের বড় টার্গেটের জবাবে খেলতে নেমে ১৬৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় মাশরাফির দল। সাকিব ৬৩ ও সাব্বির ৩৯ ছাড়া কেউই তেমন ভালো কিছু দেখাতে পারেননি।
ইস্ট লন্ডনে প্রথমে ব্যাটিং করে ৩৬৯ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারিয়ে বসেছে বাংলাদেশ। প্যাটারসনের বলে সাজঘরে ফিরে যান ইমরুল কায়েস। এরপর চতুর্থ ওভারে প্যাটারসনই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন লিটন দাসকে। টাইগারদের স্কোর তখন ১৫ রান। এরপর দলীয় ২০ রানে টাইগারদের বিপদ বাড়িয়ে ফিরে যান সৌম্য সরকার। রাবাদার বলে স্লিপে ক্যাচ নেন মার্করাম। এর পর সাজ ঘরে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহও। উইয়ান মাল্ডারের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রিয়াদের সংগ্রহ ২ রান।
রিয়াদ ফিরে যাওয়ার পর ৬৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সাকিব আল হাসানও সাব্বির রহমান। দলের দুরবস্থার মধ্যে ব্যক্তিগত অর্ধশত পূরণ করেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু এরপর ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ৬৩ রান করে ফিরে যান সাজঘরে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি তার ৩৫তম অর্ধশত। ইনিংসের ৩১তম ওভারে এইডেন মার্করামের বলে জেপি ডুমিনির হাতে ধরা পড়েন তিনি।
সাকিব ফিরে গেলে একই ওভারে সাব্বির রহমানও আউট হয়ে যান। উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাব্বির করেন ৩৯ রান। ৩৮তম ওভারে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি করেন ১৭ রান। ৪১তম ওভারে ইমরান তাহিরের বলে জেপি ডুমিনির হাতে ক্যাচ হন তাসকিন আহমেদ। একই ওভারে এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাতে ক্যাচ হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০০ রানে জয়ী হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর আগে তৃতীয় ওয়ানডেতেও বড় স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে টাইগারদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় রানের বড় পাহাড়। টাইগাররা কি পারবে এই পাহাড় টপকাতে। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩৬৯ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। জয়ের জন্য বাংলাদেশকে রান করতে হবে ৩৭০ রান।
রবিবার প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ৩৬৯ রানের পাহাড় গড়েছে স্বাগতিকরা।
সম্মান রক্ষায় অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়াতে হলে এই ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই টাইগারদের সামনে। কারণ, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে রবিবার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললো দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৫৮।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আজ কুইন্টন ডি কক ৭৩, ফাফ ডু প্লেসিস ৯১ ও এইডেন মার্করাম ৬৬ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি, তাসকিন আহমেদ ২টি ও রুবেল হোসেন ১টি করে উইকেট নেন।
ইস্ট লন্ডনে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও সাউথ আফ্রিকার মধ্যকার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ। সিরিজে এখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে প্রোটিয়ারা। অর্থাৎ, স্বাগতিকরা ইতোমধ্যে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে রেখেছে।
আজ টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১১৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ হন টেম্বা বাভুমা। তিনি করেন ৪৮ রান।
এরপর দলীয় ১৩২ রানে কুইন্টন ডি কককে ফেরান মিরাজ। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন তিনি। ডি কক করেন ৭৩ রান।
৪১তম ওভারের প্রথম বলে রান নিতে গিয়ে ইনজুরি পেয়ে মাঠ ছাড়েন ফাফ ডু প্লেসিস। ৬৭ বল খেলে ৯১ রান করেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে রান আউট হন ওয়ানডেতে আজ অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা এইডেন মার্করাম। তিনি করেন ৬৬ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় রান যখন ৩২৫ তখন রুবেল হোসেনের বলে মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতে ক্যাচ হন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ১৫ বল খেলে ২০ রান করেন তিনি।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে দুইটি উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। ওভারের প্রথম বলে উইয়ান মাল্ডার ও শেষ বলে আন্দিল ফেহলাকওয়েওকে সাজঘরে ফেরান তিনি।
এর আগে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বড় পরাজয় টাইগারদের। ৩৫৩ রানের পাহাড় টপকাতে মাঠে নেমে ২৪৯ রানেই অলআউট। এতে শনির দশা যেন কোনোমতেই কাটছে না। টাইগারদের আজকের পরাজয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ তে সিরিজ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ওয়ানডেতেও ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।
দুই ওভার বাকি থাকতেই ২৪৯ রানে অলআউট বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হারলো ১০৪ রানে। সঙ্গে সিরিজ হারও নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের। ইমরুল আর মুশফিক ছাড়া কেউ ৫০ পেরোতে পারেনি। অন্যদের মধ্যে মাহমুদুল্লাহ ৪৬ বলে করেন ৩৫ রান। বাংলাদেশ শেষ ৬ উইকেট হারালো ৬৫ রানের মধ্যে।
এদিন ব্যাটিং করতে নেমে ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কেউ দায়িত্বের সঙ্গে খেলতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতেও এই দুজন ছিলেন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরার। সেই ম্যাচে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ।
৩৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আজ শুরুতে বেশ ইতিবাচকভাবে ব্যাটিং করেন তামিম ও ইমরুল। তবে অষ্টম ওভারে এসে প্রতিরোধটা শেষ হয়। দলীয় ৪৪ রানে ডিন প্রিটোরিয়াসের বলটা ঠেকাতে পারেননি তামিম। বল এসে লাগে তাঁর প্যাডে। প্রোটিয়া ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দিতে মোটেও সময় নেননি আম্পায়ার। তামিমও রিভিউ নেওয়ার সাহস করেননি। ২৩ রান করেন তিনি।
এরপর ভালো খেলছিলেন লিটন দাস। ফেলুকায়োর বলে তিনিও লেগ বিফোর হন। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। ১৪ রান করেন লিটস। এরপর লড়াইটা চালিয়ে যান ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৩ রান যোগ করেন তাঁরা। এরপর দলীয় ১৬২ রানে ফিরে যান ইমরুল। খানিক বাদে ফিরে যান সাকিব আল হাসানও। ইমরুল ৬৮ রান করেন। সাকিব করেন মাত্র ৫ রান।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গত ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ান এই ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা টেনে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। প্রিটোরিয়াসের বলে ডুমিনিকে ক্যাচ দেন এই ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার আগে ৭০ বলে চারটি চারে ৬০ রান করেন মুশি।
মুশফিকের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যায়। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমানরা কেবল রানের ব্যবধানটাই কমিয়েছেন। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে অ্যানদিলে ফেলুকায়ো নিয়েছেন চারটি উইকেট। এ ছাড়া ইমরান তাহির নেন তিন উইকেট।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে আগে ব্যাট করে সাড়ে তিন শ রান করা মোটেও অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।
কিন্তু চলতি সফরে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ফর্ম এই টার্গেটকেই কঠিন করে ফেলেছে। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ডি ভিলিয়ার্সের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি আর হাশিম আমলার ব্যাটিং দাপটে ৫ উইকেটে ৩৫৩ রান তুলে প্রোটিয়ারা। রুবেলের ৩ উইকেট আর সাকিবের ২ উইকেটে রানবন্যা আটকানো সম্ভব হয়নি।
ইনিংসের শুরু থেকে সাবলীলভাবেই খেলছিল প্রোটিয়ারা। আরেকটি শতরানের ওপেনিং জুটি গড়ার আগেই আঘাত হানেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের ঘূর্ণিবলে লাইন মিস করে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আগের ম্যাচে দেড় শতাধিক রান করা কুইন্টন ডি কক (৪৬)রানে ফিরে এসেছিল সাজ ঘরে। ৯০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দ্বিতীয় ব্রেক থ্রু টিও এল একই ওভারে। দুর্দান্ত ফ্লাইট ডেলিভারিতে অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিসের স্টাম্প উড়ে গেল। কোনো রান না করেই ফিরতে হলো ডু-প্লেসিসকে।
৯০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ১৩৬ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন ডি ভিলিয়ার্স এবং গত ম্যাচের শতাধীক রানের অধীকারি হাশিম আমলা। ওই মুহূর্তে একটি ব্রেক থ্রু দরকার ছিল। হাশিম আমলাকে (৮৫) মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি করে সেই ব্রেক থ্রু এনে দেন রুবেল হোসেন।
কিন্তু কামব্যাক ম্যাচে ঠিকই ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ৬৮ বলে ঝড়ের গতিতে সেঞ্চুরির পর রুবেলের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেন ১০৪ বলে ১৫ চার ৭ ছক্কায় ১৭৬ রান। এরপর ডুমিনি (৩০) আর প্রিটোরিয়াসকেও (০) শিকারে পরিণত করেন রুবেল।