শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা ও নিপীড়নের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বুয়েট ক্যাম্পাস। দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা আট দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে উপাচার্য বিশেষ কাজে চীনে অবস্থানরত করায় শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন তার দপ্তরের কর্মকর্তা।
পলাশী আর বকশিবাজার মুখেই বুয়েট প্রবেশ পথে পৃথক দুটি গেট স্থাপন ও পর্যাপ্ত প্রহরি নিয়োগ, বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে মামলা দায়ের করা এবং সুবিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত মামলার কার্যক্রম বুয়েট প্রশাসনকে পরিচালনা ও তদারকি করা, মাদক ব্যবসায়ী স্টাফ কোয়ার্টারের কর্মচারীদের বহিষ্কার, শহীদ মিনার সংলগ্ন মাদকের অভয়ারণ্য ফুট ওভার ব্রিজ অপসারণসহ আট দফা দাবিতে সোমবার বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হাজারো ছাত্রছাত্রী।
আন্দোলনরত বুয়েটের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর বুয়েটের শহীদ মিনার থেকে পলাশী মোড় পর্যন্ত বুয়েট ছাত্ররা মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে যায়। এতে মাদকব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়।
পরে ওরা প্রথমে একজন শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে মারধর করে এবং আরেকজনের কাছ থেকে সাইকেল ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে- গাঁজা সেবনকারীদের মধ্যে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের প্রভাবশালী কেউ একজন ছিল। তাকে গাঁজা সেবনে বাধা দেওয়ায় সে ক্ষুব্ধ হয়ে পরের দিন ২৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩০-৪০ জন ছাত্র বুয়েট ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। এতে অর্ণব, পিয়াল, সৌরভসহ বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এরমধ্যে গুরুতর আহত সাদমান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
এহেন ঘটনার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য বা নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ছাপ মেলেনি। বরং প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা
প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসে নিজেদের অনিরাপদ বলে মনে করে। এমতাবস্থায় বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয় বলে জানান বুয়েট যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের এক ছাত্র।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে না। আন্দোলন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ছাত্রদের আট দফা দাবি মেনে নিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- পলাশী আর বকশিবাজার মুখেই বুয়েট প্রবেশ পথে পৃথক দুটি গেট স্থাপন। বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সংবাদ সম্মেলন করে সংঘর্ষের দিনের সিসিটিভি ফুটেজ মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয় উন্মুক্ত করা। বুয়েট ছাত্রদের নিপীড়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে বুয়েট কর্তৃক মামলা দায়ের ও পরিচালনা করা। ছাত্র নিপীড়নের ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া ও গড়িমসিকারীদের জবাবদিহি করা। স্টাফ কোয়াটারের মাদক ব্যবসায়ী রাজু, অর্ণব, শুভ, পাপন, নাকিব, ফয়সালকে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে উচ্ছেদ করা। মাদকের অভয়ারণ্য বুয়েট শহীদ মিনার সংলগ্ন অপ্রয়োজনীয় ফুট ওভার ব্রিজটি অপসারণ করা। বকশীবাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত বহিরাগত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করাসহ বুয়েট ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা। ক্যাম্পাসের যে সকল এলাকা এখনো সিসিটিভির আওতায় নেই সেগুলোতে সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া।
দাবি দাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে জানায় বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও অভিযোগ প্রসঙ্গে বুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।