
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিবৃতির কারণেই সুপ্রিম কোর্টকে বিবৃতি দিতে হয়েছে বলে হাইকোর্টের বিচারকদের অবহিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওহ্হাব মিঞা।
সোমবার বিকাল ৪টায় কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ কথা বলেন।
সভায় তিনি এও বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে ওই লিখিত বক্তব্য না দিলে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হত না।
সভায় প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়া এবং বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষাপট নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া বিবৃতির বিষয়ে উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অবহিত করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
এর আগে শুক্রবার রাতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একটি বিবৃতির প্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি পাল্টা বিবৃতি প্রদান করে। বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ এবং তার সঙ্গে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের না বসার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
রবিবার বেলা ১১টায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার লিখিত বক্তব্য আইনসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেন। সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্ত হবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
এর আগে রবিবার সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) আজিজুল হক স্বাক্ষরিত একটি নোটিস ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
নোটিসে বলা হয়, ‘নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ১৬ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ, রোজ সোমবার বেলা ০৪:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতিগণের অংশগ্রহণে অত্র কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
প্রসঙ্গত, ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিরা সুপ্রিম কোর্টসহ বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার দায়িত্ব গ্রহণের পর একবার ফুল কোর্ট সভা করেছেন। এ নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার ফুল কোর্ট সভা আহ্বান করলেন।
এর আগে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এমন তথ্য জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন ও অর্থপাচারসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও অন্য বিচারপতিদের অনাস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়।
এই বিবৃতির পর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতির আবারো দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টি সুদূর পরাহত। সেই সাথে চলমান সব বিতর্কেরও অবসান হয়েছে বলে জানান মাহবুবে আলম। ছুটি ও অসুস্থতার বিষয়ে দীর্ঘ দিনের মৌনতা ভেঙ্গে শুক্রবার গণমাধ্যমে সামনে বক্তব্য ও লিখিত বিবৃতি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ওই বিবৃতিতে সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসনিক পদে রদবদলের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের উদ্বৃত্তি দিয়ে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে নিজের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন দেশের ২১তম এই প্রধান বিচারপতি।
অবশেষে লিখিত ওই বক্তব্যের জেরে সুপ্রিমকোর্ট নিজ ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে এই বিবৃতি। যেখানে উল্লেখ করা হয় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অবগত করেন রাষ্ট্রপতি। ওই অভিযোগের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য জানার পর অন্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে বিচারিক কাজ পরিচালনায় অনীহা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে শুধু দাফতরিক কাজ নয়, প্রধান বিচারপতির সব ক্ষমতাই দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।