চীনকে মোকাবিলার জন্য চলতি সপ্তাহে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘চার পক্ষীয়’ জোট গঠনের প্রস্তাব প্রকাশ করার প্রেক্ষাপটে ভারত জানিয়েছে, নয়া দিল্লির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে ‘সমমনা দেশগুলোর’ সাথে কাজ করতে তারা প্রস্তুত।
নিক্কি এশিয়ান রিভিউতে প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় এলাকাজুড়ে মুক্ত বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে ‘উচ্চ পর্যায়ের সংলাপের’ প্রস্তাব দেবে জাপান। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের (ওবিওআর) পাল্টা পদক্ষেপ এই প্রস্তাব।
শুক্রবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেন, ‘আমাদের স্বার্থ এবং দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নিতে’ বিভিন্ন দেশের সাথে কাজ করার ব্যাপারে ভারত উন্মুক্ত।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত এ ব্যাপারে ‘খুব কঠোর’ নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর এশিয়া-প্যাসিফিক প্রশ্নে রাশিয়া-ভারত-চীন সম্মেলন হয় এবং সেইসাথে ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা নিয়ে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। সম্প্রতি আমরা ভারত-জাপান-অস্ট্রেলিয়ার সাথে আলোচনা করছি। আমরা ভারত-আফগানিস্তান-ইরানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এছাড়া ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তান আলোচনার অপেক্ষায় আছি। এসব বৈঠক হয় বিভিন্ন পর্যায়ে।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে উদ্যোগে ১০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চার পক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপের প্রস্তাব করেছিলেন। ভারত নীতিগতভাবে তাতে রাজি হয়েছিল। তবে ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড দৃশ্যত চীনকে উস্কানি না দিতে চার পক্ষীয় আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ান।
অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত ভারতের মনে গেঁথে আছে। এই সূত্র ধরে অস্ট্রেলিয়াকে মালাবার মহড়ায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি।
জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে তিনি গত আগস্টে ইস্ট এশিয়ান সামিটের ফাঁকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সাথে আলোচনা করেছেন।
চলতি মাসের প্রথম দিকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে টিলারসন বিষয়টির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি চীনের ওবিওআর উদ্যোগকে ‘অর্থনৈতিকভাবে লুণ্ঠনমূলক’ হিসেবে অভিহিত করে একে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনিও ইস্ট এশিয়া সামিটে এ নিয়ে আলোচনার কথা স্বীকার করেছেন।
ভারত ওবিওআর শীর্ষ সম্মেলন এই অজুহাতে বয়কট করে যে, প্রকল্পটি পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর দিয়ে গেছে এবং প্রকল্পটির অর্থায়ন-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর ২৭ অক্টোবর বলেছেন, ওই প্রকল্প নিয়ে ভারতের আপত্তিতে এখন অন্য অনেক দেশই সুর মেলাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা এখন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কাছ থেকে একই ধরনের কথা শুনছি। আমি মনে করি, আমাদের একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের নিজস্ব মত থাকা উচিত। আমরা কেবল বড় আন্তর্জাতিক বিতর্ক অনুসরণ করা বা তা থেকে বিরত থেকেই ক্ষান্ত থাকতে পারি না।