
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদে ও হত্যাকান্ড মামলার আসামি ইউপি সদস্য শাহ আলমকে গতকাল রবিবার রাতে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশের (পিবিআই) উপর হামলা করে এবং তাদের ঘেরাও করে রাখে। এব্যাপারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে তারা ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ছোঁড়ে উক্ত ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় পিবিআই’র ৪ জন সদস্য আহত হয়। আহতরা হচ্ছে এসআই প্রভাত চন্দ্র বর্মণ ও মোজাম্মেল হক, এএসআই শাহ জালাল এবং কনস্টেবল বজলুর রশীদ। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এবং অতিরিক্ত পিবিআই সদস্য ঘটনাস্থলে যায়। পরে গোবিন্দগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে আহত পিবিআই সদস্য ও মামলার অন্যতম আসামি ইউপি সদস্য শাহ আলমকে থানায় নিয়ে আসে।
জানা গেছে, গতকাল রবিবার রাত ১০টায় সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ বাজারে গাইবান্ধা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই মামলার আসামী ধরতে যায়। বাজারের একটি সেলুন থেকে মামলার অন্যতম আসামী সাপমারা ইউপি সদস্য শাহ আলমকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাকে ছিনিয়ে নিতে তার সন্ত্রাসী সহযোগিরা হঠাৎ করেই পুলিশের উপর হামলা চালায়। এতে ওই ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহতদেরকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে এএসআই শাহ জালাল মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, ইউপি সদস্য শাহ আলম সাঁওতাল উচ্ছেদ অগ্নিসংযোগ, হত্যা, জ্বিনের বাদশাসহ নানা প্রতারণা মামলার একজন ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি।
তাকে পিবিআই সদস্যরা গ্রেফতার করলে ঘটনাস্থলে তার অনুসারীরা লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হয়ে আসামিকে ছিনতাই করে নেয়ার চেষ্টা চালায় এবং তাদের মারপিট করে আহত করে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি চালানো হয়। এব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ মোবাইল ফোনে জানান, পিবিআই সদস্যরা আসামী ইউপি সদস্য শাহ আলমকে গ্রেফতার করতে গেলে তার সহযোগিরা তাদের ঘেরাও করে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এসময় পিবিআই সদস্যরা গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করে এবং গোবিন্দগঞ্জ থানায় সহযোগিতা চায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে এবং আসামি শাহ আলমসহ আহত পিবিআই পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্ম ইক্ষু খামার এলাকার সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে ৩ সাঁওতালকে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে থমাস হেমব্রন বাদী হয়ে সাপামারা ইউপি সদস্য শাহ আলমসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫শ’ থেকে ৬শ’ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন উপর অর্পিত হলে গাইবান্ধার পিবিআই’র সদস্যরা অন্যতম আসামি ইউপি সদস্য শাহ আলমকে গ্রেফতার করতে যায়।