মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের হাতে দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মুসলিমদের পাশাপাশি মায়ানমারের কয়েকজন বৌদ্ধও অংশ নেন।
শনিবার লন্ডনের ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সরকারি অফিসের সামনে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিবাদ সমাবেশে প্রায় দুই শতাধিক জন মানুষ অংশ নেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ কর’ স্লোগান দেন।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অত্যাচারের নিন্দা করে তারা নির্যাতনের ছবি, প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার বহন করেন।
আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (এআরএনও) সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আমাদের ভাই-বোনদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য আমরা মায়ানমার সরকারের প্রতি আমাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য একটি ক্ষমতাশালী ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ায় আমরা ইউকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যুক্তরাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
প্রতিবাদকারীদের কিছু প্ল্যাকার্ড ‘আরাকানে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ কর’, ‘সহায়তার ওপর অবরোধ বন্ধ কর’ ইত্যাদি প্রতিবাদী স্লোগান শোভা পায়।
কয়েকজন বিক্ষোভকারী সাম্প্রতিক নৃশংসতায় নিহত রোহিঙ্গা নাগরিকদের ছবি হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শরণার্থী হিসেবে এবং বাংলাদেশে কিংবা বিশ্বের অন্যত্র ভিক্ষুক হিসাবে অপমানের জীবন নিয়ে বাঁচাতে চাই না। আমরা নিজেদের স্বদেশে বসবাস করতে চাই এবং আমাদের স্বদেশে মরতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আরাকানের ভিতরেই একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করা এবং মানবিক হস্তক্ষেপ জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’
তিনি তুরস্ক ও প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভূমিকায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ধার অভিযানে তুর্কি সরকার এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগানই প্রথম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তার প্রতিবাদী ভূমিকা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
সমাবেশে অংশ নেয়া বৌদ্ধ বিক্ষোভকারী মং জার্নি জানান, রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সত্য বলতে তিনি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।
মায়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মের এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমার নিজের দেশ রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করছে এবং গত ৪০ বছর ধরে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি বিশ্বকে এটি জানাতে যে, রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী নয় … তারা আমাদের নিজেদের লোক এবং বার্মার সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মুসলিম-বিরোধী ও বর্ণবাদী নীতি গ্রহণ করেছে।’
মং জার্নি আরো বলেন, ‘আমি ব্রিটিশ সরকারকে বলছি যে তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে কারণ তারা বার্মার হত্যাকারীদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তারা অং সান সু কিকে সমর্থন করছে।’
-জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন
জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে যুক্তরাজ্যে বার্মা রোহিঙ্গা সংস্থার সভাপতি তান খিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার আশা করছি।’
খিন বলেন, ‘তুর্কি সরকারের অব্যাহত সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা সত্যিই তাদের প্রশংসা করছি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্থাপনের জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সমষ্টিগত প্রদক্ষেপের জন্য তুর্কি সরকার অন্যান্য সরকারের কাছে সমস্যাটি উত্থাপন করবে বলে আমরা আশা করছি।
বাংলাদেশি বিক্ষোভকারী শিমুল সুলতানা জানান, তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য লড়াই করতে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন; কারণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আর কেউ নেই।
সুলতানা বলেন, ‘এবার মায়ানমান জাতিগত নিমূর্লে লিপ্ত হয়েছে। বার্মার সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আমরা তুর্কি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কিন্তু এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
গত দুই সপ্তাহে নিগৃহীত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৩,০০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্য অনেক নারী ও শিশুও রয়েছে।
দেশটির সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সূত্র: আনাদুলো এজেন্সি