একাধারে তিনি হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক ঋষি, জনহিতৈষী, বহুমুখী গায়ক, চৌকস ক্রীড়াবিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক, লেখক, গীতিকার, জীবনীকার…। তার ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে এই পরিচয় ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের। অ্যাকাউন্টে আবার নামের আগে ড. উপাধিও উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে এই ধর্ষক গুরুর। তিনি জেলে যাওয়ার পর থেকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হচ্ছে। তার রহস্যময় ডেরার ভেতর থেকে বের হচ্ছে যত সব আজব ও অভিনব উপাদেয়। সর্বশেষ এক সাধ্বী জানান, তার ডেরায় থাকা কমপক্ষে দুই হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছে রাম রহিম। ওই সাধ্বী নিজেই, প্রতিদিন পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পরপর একজন নতুন মেয়েকে রাম রহিমের ডেরায় ডেকে পাঠাতেন।
ইন্ডিয়া টিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরিয়ানায় সিরসার ডেরার ওই সাধ্বী এক সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেছেন। ওই সাধ্বী রাম রহিমের ডেরায় প্রায় ৩০ বছর ছিলেন।
ওই সাধ্বীর দাবি, রাম রহিমের এই অপকর্মের কথা অনেক মেয়েই তাদের মা-বাবাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাম রহিমের ওপর অগাধ বিশ্বাসের কারণে নিজের মেয়েদের কথা বিশ্বাস করতেন না মা-বাবারা।
সাক্ষাৎকারে রাম রহিমের পালিত কন্যা হানিপ্রীত সম্পর্কে ওই সাধ্বী বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে হানিপ্রীতের বিয়ে দিয়েছিলেন এই ধর্ষক গুরু। এরপরে নকশা অনুযায়ী স্বামীর সঙ্গে হানির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান তিনি। মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই পরে তিনি হানিপ্রীতকে পালিত কন্যা হিসেবে পরিচয় দেন। হানি পালিত কন্যা নয়, তিনি আসলে রাম রহিমের প্রেমিকা। ডেরায় বাস করা প্রায় সবাই এসব অপকর্ম সম্পর্কে জানতেন, কিন্তু তারা সবাই এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ছিলেন।
সাধ্বীর দাবি, রাম রহিমের বিলাসবহুল ডেরার ভেতর গোপন গুহা বা যৌন গুহা ছিল। সেই গুহার খোলা জানালা দিয়ে ডেরার মেয়েদের দেখে দেখে পছন্দ করতেন তিনি। তারপর পছন্দের মেয়েকে নিয়ে ধর্ষণ করতেন তিনি। ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা হলে মেয়েদের জোর করে গর্ভপাতও করাতেন এই ভন্ড বাবা। ডেরার এ রকম হাজারো মেয়ের গর্ভপাত করানো হয়েছে। প্রথম দিকে পাঞ্জাবের বাথিন্ডার বিভিন্ন এলাকায় গর্ভপাত করানো হতো। পরে রাম রহিম নিজেই তার ডেরার ভেতর হাসপাতাল চালু করে গর্ভপাত করাতেন।
গত ২৫ আগস্ট দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে করা দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় রাম রহিমকে। এরপর নেয়া হয় রোহতক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে। এতে রাম রহিমের সমর্থকেরা পঞ্চকুলা এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩৮ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হন। পরে গত ২৮ আগস্ট রাম রহিমকে দুটি মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন সিবিআই আদালত।