
তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৭৭ রান। ৭২ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিং করছে অস্ট্রেলিয়া। দিনের শেষে অনেকটা চাপে ফেলে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনটি নিজেদের নিয়ন্ত্রয়ণে নিয়ে নিয়েছেন টাইগাররা।
জন্মদিনে দারুণভাবেই জ্বলে উঠলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তুলে নিলেন ৩ উইকেট। স্পিনারদের দাপটের সিরিজে বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তি হয়েই রইলেন এই বাঁ হাতি পেসার। ওয়ার্নার, হ্যান্ডসকম্বদের ব্যাটিং দেখে একপর্যায়ে মনে হয়েছিল প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়তে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিনের বিকেলে ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে।
মুস্তাফিজ-মিরাজের আঘাতে ভেঙে পড়ল অজিদের মিডল অর্ডার। দুজনেই ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। গলার কাঁটা হিসেবে আটকে থাকা ওয়ার্নারকে ফেরান তার আইপিএল ‘বন্ধু’ মুস্তাফিজ। অ্যাগারকে আউট করে একমাত্র শিকার ধরেন সাকিব। ৯ উইকেটে ৩৭৭ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে অজিরা। প্রথম ইনিংসে এখন পর্যন্ত তাদের লিড ৭২ রানের।
সকালে ভারী বর্ষণসহ প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৃষ্টি। ম্যাচ শুরু হয় দুপুর পৌঁনে একটায়। মানে দুই সেশন মিলে আড়াই ঘণ্টা খেলা হতে পারেনি এদিন। আজ তৃতীয় দিনে খেলা হয়েছে ৫৪ ওভার।
দুই উইকেটে ২২৫ রানে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৮০ রানে। ৮৮ রানে ওয়ার্নার ও হ্যান্ডসকম্ব ৬৯ রানে ছিলেন অপরাজিত। আগের দিনেই ১২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বাংলাদেশকে ব্যাটফুটে ঠেলে দেয় এই জুটি।
বুধবারও জলদি জুটি ভাঙার লক্ষ্যটা পূরণ হচ্ছিলো না টাইগারদের। তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। বোলাররা নন, অবশেষে রান আউটে জুটি ভাঙে। দলীয় ২৫০ রানের মাথায় সাকিব আল হাসানের অসাধারণ থ্রোতে ৮২ রানে রান আউট হয়ে ফিরে যান পিটার হ্যান্ডসকম্ব। তার আগে ১৫২ রানের বড়সড় জুটি গড়ে যান তিনি।
তবে থামানো যাচ্ছিলো না ডেভিড ওয়ার্নারকে। বাংলাদেশকে হতাশ করে ক্যারিয়ারের ২০তম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন ঢাকা টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান। ফেরেন ১২৩ রান করে। বোলার ছিলেন মোস্তফিজুর রহমান।
অবশ্য ওয়ার্নারকে আউট করার পিছনে মোস্তফিজের যেটুকু কৃতিত্ব তার চেয়ে বেশি কৃতিত্বের দাবিদার ইমরুল কায়েস। হাফ চাঞ্চকে ইমরুল ফুল চাঞ্চে পরিণিত করেছেন। এ যে মোস্তাফিজের জন্মদিনে ইমরুলের পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার।
আউট হবার আগে দারুণ এক কৃতিত্বের ভাগিদার হয়ে গেছেন ওয়ার্নার। ষষ্ঠ অজি ব্যাটসম্যান হিসেবে উপমহাদেশে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করলেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারের পর ১৮ রানে কার্টরাইটকে বিদায় করেন মিরাজ। তারপর দ্রুত চার উইকেট পড়ে গেলে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে টাইগার শিবিরে। ওয়েডকে ৮ রানে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। এরপর ভালো খেলতে থাকা ম্যাক্সওয়েলকে (৩৮) মুশফিকের ক্যাচে পরিণিত করেন মিরাজ। পরের উইকেটটিও নেন মিরাজ। অসাধারণ একটি বলে কামিন্সকে ৪ রানে এলবি করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৮ উইকেটে ৩৬৪। মানে বাংলাদেশের চেয়ে ৫৮ রানে এগিয়ে। শেষ দিকে অ্যাশটন আগার তরতর কিছু রান তুলে নেন। ২২ রানে তাকে বিদায় করেন সাকিব। অজিদের অলআউট করা যায়নি শেষমেশ। ৯ উইকেটে ৩৭৭ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে তারা। বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি, মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি ও সাকিব আল হাসান ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১১৩.২ ওভারে ৩০৫/১০
(তামিম ৯, সৌম্য ৩৩, ইমরুল ৪, মুমিনুল ৩১, সাকিব ২৪, মুশফিক ৬৬, সাব্বির ৬৬, নাসির ৪৫, মিরাজ ১১, তাইজুল ৯; কামিন্স ০/৩৩, লায়ন ৭/৯৪, ও’কিফ ০/৭৯, অ্যাগার ২/৫২, ম্যাক্সওয়েল ০/১৩, কার্টরাইট ০/১৬)
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ১১৮ ওভারে ৩৭৭/৯
(রেনশ ৪, স্মিথ ৫৮, ওয়ার্নার ১২৩, হ্যানন্ডসকম ৮৮, ম্যাক্সওয়েল ৩৮, কার্টরাইট ১৮, ওয়াডে ৮, অ্যাগার ২২, ও’কিফ ৮* ; মিরাজ ৩/৯৩, মোস্তাফিজ ৩/৮৪, সাকিব ১/৮২, তাইজুল ১/৭৮, নাসির ০/১৪)।