গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ ঘাঘট নদীর প্রবল পানির চাপে তিন বছর আগে ভেঙ্গে যাওয়া গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের সালাইপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ফলে ভেঙ্গে যাওয়া অংশ দিয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ও সদর উপজেলার বল্লমঝাঁড় ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করে প্রায় ১২টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ফলে ভেসে গেছে পুকুর ও মৎস্য চাষ প্রকল্পের মাছ। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল ও শাকসবজির ক্ষেত। পানিতে প্লাবিত হয়েছে ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিকে এসব পানি এসে চাপ পড়ছে গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর সড়কে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বল্লমঝাঁড় ইউনিয়নের কাজলঢোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নতুন গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন সালাইপুর গ্রাম। ঘাঘট নদীর কাজলঢোপ ফোরকানিয়া গ্রাম থেকে সালাইপুর গ্রাম পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় পাঁচকিলোমিটার এলাকার অসংখ্য স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বাঁধের কাজলঢোপ ফোরকানিয়া স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বাঁশ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধের চকিদারের খেওয়া নামক স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে বাঁশের পাইলিং দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। সালাইপুর গ্রামের বাঁেধর ভাঙ্গা ওই অংশটি দিয়ে বুধবার রাত থেকে পানি ঢুকে ইতিমধ্যে বনগ্রাম ইউনিয়নের সালাইপুর, মন্দুয়ার, দক্ষিণ মন্দুয়ার, গড়ের মাঠ, জয়েনপুর, বল্লমঝাঁড় ইউনিয়নের বড় গয়েশপুর, চক গয়েশপুর, কাজলঢোপসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের স্কুল, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়া ওই অংশটিতে স্থানীয় ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে কয়েকটি বাঁশের খুঁটির উপর দিয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, বন্যায় বাঁধটির সালাইপুর গ্রামের প্রায় ৫০ ফুট অংশ ভেঙ্গে যায়। প্রতিবছর বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া এই অংশ দিয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ও সদর উপজেলার বল্লমঝাঁড় ইউনিয়নের ২০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়া বন্যার এই পানি এসে চাপ পড়ে গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর প্রধান সড়কের উপর। বন্যায় প্লাবিত হয়ে আশেপাশের ৫টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ থাকে। সালাইপুর গ্রামের মফিজল হক (৮০) বলেন, তিনবছর আগে পানির চাপে সালাইপুর গ্রামের ঘাঘট নদীর প্রায় ৫০ফুট বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ফলে এই পথে চলাচলকারী প্রায় ৫হাজার মানুষকে অসহনীয় কষ্ট পেতে হচ্ছে। বাঁধটি মেরামত না করায় আবারও বন্যার পানি ঢুকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। অনেক বাড়ির আঙ্গিনায় ও ঘরে এক হাটু করে পানি উঠেছে। বড় গয়েশপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান (৪৮) বলেন, সামান্য কিছু জায়গা মেরামত না করার ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবছর নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় আমার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ফলে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন সরকার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার তাগাদা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই প্লাবিত হয়ে পড়ে বনগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, যেটা ভাঙ্গা আছে, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। নতুন করে যাতে কোন বাঁধ না ভাঙ্গে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। পরে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।