
রাজশাহীতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে নিজ জিম্মায় বাড়ি যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর মূখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ওই তরুণীর হাজির করা হয়। পরে আদালত ওই তরুণী প্রাপ্ত বয়স্কা হওয়ায় নিজ জিম্মায় বাড়ি যাওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। বুধবার সকালে রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসেস সেন্টারে (ওসিসি) তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করে হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসকের বরাদ দিয়ে জানিয়েছেন শাহমুখদুম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন তুহিন।
তিনি বলেন, সকালে শাহমুখদুম থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি আরো জানান, এই ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার সামশুল আলম বাদশা ও আবু ফায়েজ নাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে পাঁচদিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক তুহিন। ধর্ষিত ওই তরুণীকে দিয়ে ফাঁদ পেতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পরিদর্শক তুহিন।
গত সোমবার রাজশাহীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করা ওই ছাত্রীকে রাজশাহী নগরের শাহমুখদুম থানার নওদাপাড়া এলাকার একটি বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দল বেধে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস রাজশাহী শাখার সাবেক শিক্ষকসহ দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে আটক দুই বন্ধুকে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (ইউআইটিএস) এর রাজশাহী শাখার সাবেক শিক্ষক সামশুল আলম বাদশা ও রাজশাহীর গোরহাঙ্গা এলাকার ইজিটাস কম্পিউটার দোকানের মালিক আবু ফায়েজ নাহিদ। এদের মধ্যে বাদশার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল এবং নাহিদের বাড়ি একই উপজেলার হাসনিপুর গ্রামে। তারা দুইজনেই রাজশাহী শহরের বোয়ালিয়া থানার সাগরপাড়া এলাকায় বসবাস করেন।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন তুহিন জানান, ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহরে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করে বের হয়ে চাকরির চেষ্টা করছিলেন তিনি। সাবেক শিক্ষক বাদশার সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়। চিকিৎসার জন্য ওই ছাত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে আসেন। পরে তিনি ধর্ষণের শিকার হন।
তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য ৩১ জুলাই সকালে ট্রেন যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে আসেন ওই ছাত্রী। রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপাতালের বহির বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে দুপুরে ফোন দেন তার ফেসবুক বন্ধু বাদশাকে। এসময় বাদশা তাকে ডেকে নেয় নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকায় তার বন্ধুর ইজিটাস কম্পিউটারের দোকানে। ওই ছাত্রী তার কম্পিউটারের দোকানে গেলে বাদশা তার বান্ধুবী বলে নাহিদের সঙ্গে পরিচয় করে দেয়। এরপর দুপুরে খাবারের কথা বলে নগরীর শাহমুখদুম থানার নওদাপাড়া এলাকার গ্রীন গার্ডেন নামের একটি বাগান বাড়িতে (গেস্ট হাউজ) নিয়ে যায় ওই ছাত্রীকে। সেখানে একটি কক্ষে রেখে প্রথমে বাদশা ও পরে নাহিদ ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এর পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ছাত্রীকে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় বাদশা ও নাহিদ। এর পর হোটেল কর্মচারীদের সহযোগিতায় রাত ৮টার দিকে শাহমুখদুম থানায় নিয়ে ঘটনাটি জানায়। পরে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করলে রাতেই অভিযান চালিয়ে রাতেই গোরহাঙ্গা এলাকা থেকে পুলিশ বাদশা ও নাহিদকে গ্রেপ্তার করে।