গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বন্যার কারনে চরের মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লালর-পালন করা এসব গরু এখন খাদ্য অভাবে স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করেছে। ঈদে গরু বিক্রি করে হাতে ভালো টাকা আসবে সে স্বপ্ন তাদের শেষ হয়ে গেল।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের চর জামিরা আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ, গবাদিপশু একসঙ্গে বসবাস করছে। মানুষের খাদ্য কোন ভাবে ঝুটলেও গরু খাদ্য যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারিদের। খামারি বলতে চরের প্রতিটি বাড়িতে ২/৩টি করে গরু লালল-পালন করে কোরবানি ঈদে বিক্রি করার জন্য। তাছাড়াও তারা বারো মাসে গরু পালন করেন।
কিন্তু বন্যায় এই গরু এখন শাখের করাত হয়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের চরের কৃষকদের। ফুলছড়ি ইউনিয়নের খোলাবাড়ি চরের করিম মিয়া ঘরই ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। তিনি জানান, এখন হামরাই বা থাকবে কোথায়, গরুই রাখবে বা কোথায় ? এখন বাধ্য হয়ে ঈদের আগেই বিক্রি করতে হবে। কিন্ত এই দুর্যোগে অর্ধেক দামেও কেউ কিনতে চাচ্ছেন না। করিম মিয়ার মতো দীর্ঘশ্বাস এখন ফুলছড়ি উপজেলার অনেক কৃষকের। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার বানভাসি মানুষ এখন নিজেরাই আশ্রয় খুঁজছেন, গরু কিনবেন কে?
ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রেললাইন, সড়কের দুই পাশে বানভাসীদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে গৃহপালিত পশু পাখিও। সিংড়িয়া-রতনপুর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে কাবিলপুরচরের দিলবর হোসেন, তার স্ত্রী, সন্তান। সাথে রয়েছে তিনটি গরু। পলিথিনের ছাওনি দিয়ে কোন রকমে মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে তাদের। নিজেরা বৃষ্টিতে ভিজলেও গরু তিনটি যেন না ভেজে সে জন্য পলিথিন দিয়ে তাঁবু টানিয়েছেন তিনি। প্রতিটি গরু ঈদ বাজারে বিক্রি করলে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পাওয়ার আশা ছিল তার। কিন্ত অর্ধেক দামেও কেউ এখন কিনতে চাচ্ছে না। বিক্রিও করতে পারছি না, আবার খাওয়াতেও পারছি না, বলেন দিলবর হোসেন। প্রথম দফা বন্যায় এ অঞ্চলে গরু খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তারা আরও মহাবিপাকে পড়েছেন। না খাওয়ার ফলে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।
তার মতো আরও কৃষকরা বলেন, তারা গরু-ছাগল লালন-পালন করেছেন আগামী মাসের ঈদকে সামনে রেখে। এখন না পারছেন গরু বিক্রি করতে, না পারছেন রাখতে। চোর-ডাকাতের ভয়ে রাত জেগে গরু পাহারাও দিতে হচ্ছে তাদের।
ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্ডল জামিরার আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং বানভাসী মানুষের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সরবরাহ করার আশ্বাস দেন।