গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার একমাত্র নিয়মিত মাসিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মোহনার ১০৬তম আসর বসেছিল গত বৃহষ্পতিবার রাতে । জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দর্শক শ্রোতার ছিল উপচে পড়া ভীড়। সাড়ে ৭টার আগেই সুসজ্জিত মঞ্চে তৈরী শোকের মাস আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত কিশোরী শিল্পীদের একটি দল। তাদের মধ্যে ছিল তাসনিয়া, সামান্থা, মিথিলা, নিকিতা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শিরিণ আকতারের শোকের উচ্চারণের পর ওরা গাইলো যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই। অডিটরিয়ামজুড়ে তখন শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ।
একটু পর হাসিমুখে শিরিণ আকতার শিল্পীদের নাম ঘোষনা করলেন। জানালেন, এই আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রংপুরের আছিয়া ইসলাম দোলা ও ঢাকার পথের দল সংগঠনের প্রধান কন্ঠ শিল্পী গাইবান্ধার সন্তান দেবাশীষ দেব। অমনি কবুতরের ডানা ঝাঁপটানোর মত করতালি! দেবাশীষ যে এত জনপ্রিয় অনেকেরই তা জানা ছিল না। যন্ত্রানুসঙ্গে সহযোগিতা করতে এলেন গাইবান্ধাকে নিজ প্রতিভায় আচ্ছন্ন করে রাখা মাহমুদ সাগর মহব্বত, তার সাথে পরিচিত কি-বোর্ডিস্ট চুণি ইসলাম, মিজানুর রহমান মিলন, মানিক বর্মন ও নীলান্তি। দেবাশীষ শুরু করলেন অতুল প্রসাদের কে আবার বায় বাঁশি আর দোলা এ শুধু গানের দিন দিয়ে। প্রথম গানেই দোলা বুঝিয়ে দিলেন গানের জগত আগামী দিনে তার নামে জয়ধ্বনী দেবে। যেমন গায়কি আর তেমনি সুরেলা কন্ঠ! শ্রোতারা যেন নড়েচড়ে বসলেন।
এরপর শুধু গান আর গান! দেবাশীষ এখন যে কতটা পরিণত তার প্রমাণ মিলল জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের যেন কিছু মনে করো না কেউ যদি কিছু বলে গানটিতে। সমসাময়িক কালের একটি সেরা গান বাপ্পা মজুমদারের পরী গেয়ে তিনি বোঝালেন কেন তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে এতটা প্রিয়! দোলাও কম যাচ্ছিলেন না! রুণা লায়লার আয়রে মেঘ আয়রে কিংবা লতা’র গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি গেয়ে সত্যি সত্যি চমকে দিলেন! একদিকে নিজের মায়ের পছন্দের গান আমি তোমার নাম নিয়া কান্দি গেয়ে কন্ঠের ক্ষমতা দেখান দেবাশীষ, অন্যদিকে নিজের পছন্দের গান দে দে পাল তুলে দে …আমি যাব মদীনায় গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করেন দোলা! মাঝে দোলা সহশিল্পী হিসেবে সাহায্যও করলেন দেবাশীষকে। এক অপূর্ব যুগলবন্দি!
তবে ভাল লাগার মাত্রা পূর্ণতা পেল যখন প্রয়াত নাট্যজন জহুরুল ইসলাম স্বপনের মেয়ে পারমিতা ইসলাম নীলান্তি দেবাশীষের গাওয়া শেখ ইশতিয়াকের নীলাঞ্জনা গানটির সাথে গিটারে ঝংকার তুললো। সবার তখন বারবার স্বপনের কথা মনে পড়ছিল। স্বপন কি আকাশ’র ঠিকানা থেকে কন্যার এই অর্জন নিয়ে চিঠি লিখবেন?
আরেকজনের কথা না বললেই নয়। তিনি অবন্তী সাদিয়া গল্প। সত্যি আগামী দিনগুলোতে শিরিণের অসাধারণ উপস্থাপনার সাথে গল্পের ডানায় ভর করে মোহনা এগিয়ে যাবে অনেকদূর! মোহনা কর্তৃপক্ষ যেন অভিজ্ঞ ও নবীনের এই মেল বন্ধন অক্ষুন্ন রাখেন! মোহনা’র সংগঠক নৃত্য শিল্পী সিরাজুল ইসলাম সোনার দেয়া ফুল গল্পকে নিশ্চয়ই প্রাণিত করবে।
শুরুতে শিল্পীদের হাতে ফুল তুলে দেন জেলা সিপিবি’র সভাপতি মিহির ঘোষ ও শিল্পী অসীম চৌধুরী। শেষে শিল্পীদের হাতে মোহনা’র স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন মোহনার সংগঠক সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক মোদাচ্ছেরুজ্জামান মিলু ও অভিনেতা মিজানুর রহমান জুয়েল। র্যাফেল ড্র তে সঞ্চালকদের সাহায্য করে মেঘলীনাদ্যুতি ও ব্রতি। পুরষ্কার দেন নারী নেত্রী আমাতুর নূর ছড়া।
মোহনা’র এই পথচলা যেন শেষ না হয়! শুধু দর্শকদের একটি অভিমত সময়ের পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্রজন্মের পছন্দকে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের মোহনা’র সাথে যুক্ত করতে হবে। জয়তু মোহনা।