
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ৭ দিনে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলায় ৫ শতাধিক বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আদিতমারী উপেজলার গোবর্দ্ধন স্প্যার বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়ার পাশাপাশি হাতীবান্ধা উপেজলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধবুনী গ্রামে শহর রক্ষা বাধেঁর ৮টি স্থান ভেঙ্গে গেছে।

হুমকির মুখে পড়েছে ধরলা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার কুলাঘাটে শহর রক্ষা বাঁধ ও হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর তীরর্বতী গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেব মোড় এলাকার বাঁধ। সদর উপজেলার শীবের কুঠি ও চর শীবের কুঠি এলাকাতেও ধরলা নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েদ জানান, তার ইউনিয়নে পূর্ব ডাউয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ডাউয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া গত ৩ দিনে ৫৭টি বসত বাড়িসহ অসংখ্য আবাদী জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ওই উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিউল আলম রোকন জানান, তার ইউনিয়নে বুধবার বিকেলে পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত ৪ দিনে তার ইউনিয়নে ২৬টি বসত বাড়িসহ অনেক আবাদী জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। হাতীবান্ধার ইউএনও সৈয়দ এনামুল কবির ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে তাদের পুর্ণবাসনের আশ্বাস দিয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৪টি, আদিতমারী উপজেলায় ৪টি ও হাতীবান্ধা উপজেলায় ১১টিসহ মোট ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যালয়গুলো হলো- হাতীবান্ধা উপজেলার কিসামত নোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাউয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম হলদীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব হলদীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পার শেখ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিন্দুর্ণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গড্ডিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর হলদিবাড়ী শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবুদারু কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধুরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন ইসমাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আদিতমারী উপেজলার মহিষখোচা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নে গোবর্দ্ধন স্প্যার বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু পরিবার ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গন রক্ষায় জরুরীভাবে ব্যবস্থা নিতে তিনি ইতোমধ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ঈদ্রিস আলী জানান, ধরলা নদীর তীরবর্তী শহর রক্ষা বাধঁটি হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া শীবের কুঠি ও চর শীবের কুঠি এলাকায় আবাদী জমিসহ বসত বাড়ি ধরলা নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রতি নিয়ত।
হাতীবান্ধা উপেজলা সির্ন্দুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরল আমিন জানান, এবারের বন্যায় তার ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তাদের মাঝে শুকনা খাবার ও চাল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের পুর্ণবাসনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের সাথে কথা হচ্ছে। তিনি পুর্ণবাসনের আশ্বাস দিয়েছেন।
ওই উপেজলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু ও গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আতিয়ার রহমান জানান, বন্যার পানিতে সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী গ্রামের শহর রক্ষা বাঁধের ৮ স্থানে ভেঙ্গে গেছে ও গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেব মোড় এলাকায় এক বাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে যা মোরামতের জরুরী প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিলুল ইসলাম জানান, বুধবার সকালে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন বেড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বিদ্যালয়টি। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের ঘরগুলো খুলে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাটের বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে দেখভালের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার এমএম আরাফাত হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত নদী ভাঙ্গনের কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। সে কারণে এই মুহূর্তে ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তালিকা তৈরী করে প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে পুর্ণবাসন করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলা উদ্দিন খানঁ জানান, বন্যা পরিস্থিতি’র অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে অনেক এলাকায় কিছুটা ভাঙ্গন দেখা দিলেও তা রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে পুর্ণবাসন করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জেনেছি লালমনিরহাটের ৩টি উপজেলায় মোট ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাতীবান্ধা উপজেলায় ৩টি বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সাথে সমন্বয় করে নদী ভাঙ্গনে তালিকা তৈরী করতে বলেছি। প্রতিটি নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারকে পুর্ণবাসন করা হবে।