![]()
তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদের আগে মোহাম্মদ আশরাফুলকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে ধরা হতো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সত্যিকারের নক্ষত্র হয়েই এসেছিলেন আশরাফুল।
দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের ভালোবাসার মধ্যমণি আশরাফুল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কলঙ্কের কালিমা লেপ্টে দেন বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং করে। শাস্তি হিসেবে তাকে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করতে হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট প্রাথমিকভাবে আট বছরের জন্য সব ধরণের ক্রিকেট থেকে
নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আশরাফুলকে।
পরে সেই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে পাঁচ বছরে আনা হয়। সাথে আরও একটা শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। বিসিবি ও আইসিসির অধীনে আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কর্মশালা ও ট্রেনিং প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশ নিয়ে আরও দুই বছরের সাজা মওকুফ পান এক সময়ের দেশ সেরা ক্রিকেটার আশরাফুল।
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট। তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, আইসিসির ‘গুড অব কন্ডাক্ট’ সার্টিফিকেট পেয়ে খেলেছেন দেশের ঘরোয়া লিগে। বিপিএল ছাড়া বিসিবির সব টুর্নামেন্টেই খেলতে পারছেন আশরাফুল। তবে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলতে আরও অপেক্ষায় থাকতে হবে এক বছর। ২০১৮ সালের আগস্টে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ রয়েছে আশরাফুলের।
২০১৮ সালে জাতীয় দলের সাথে আশরাফুলের বিপিএলে খেলার দর্জাও খুলে যাবে। তবে সম্প্রতি, জাতীয় দলের সাথে আশরাফুলের অনুশীলনের কিছু ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর অতি উৎসাহী কিছু মানুষ, সর্বস্ব অনলাইনের বাড়াবাড়ি দেখে আশরাফুল নিজেও খানিক বিব্রত।
আশরাফুল স্পষ্ট জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার জাতীয় দলে খেলায় নিষেধাজ্ঞা আছে আইসিসির। একইভাবে এবারের বিপিএল খেলারও অনুমতি নেই। এবারের আসরে না হলেও আগামী আসরে খেলতে মুখিয়ে আছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে আশরাফুল বলেন, ‘আমি খুব ভাল করেই জানি, আমার পক্ষে ২০১৮ সালের আগস্টের আগে কিছুতেই জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব নয়। ঘরের ক্রিকেটে হাজার হাজার রান করলেও না। আর বিপিএল খেলার ওপরও আছে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা। এবার নয়, আগামী বছর মানে ২০১৮ সালের বিপিএল খেলতে পারবো আমি। ’
আশরাফুলের নতুন করে শাস্তি কমানোর আবেদনের ব্যাপারেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আইসিসির শর্ত ছিলো কোন অবস্থাতেই শাস্তি কমানো অথবা পুর্ণ বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে না। তাই শাস্তি কমানোর কথা বলার কোনো প্রশ্নই আসেনা বলে মনে করেন এই ক্রিকেটার।
আশরাফুল জানিয়েছেন, ‘আইসিসির কাছে রীতিমত শপথ করা আছে, আমার যে সব শাস্তি এখনো বহাল আছে, তা কিছুতেই কমানোর বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে না। সেই শর্ত মেনেই আমি ওই চুক্তিতে সাক্ষর করেছি। এখন নতুন করে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ আর এবারের বিপিএল খেলার অনুমতি চাওয়ার অর্থ ওই চুক্তি লঙ্ঘন। সেটা আমার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে এবং হবেও। কাজেই যে যাই বলুক আর ভাবুক না কেন, আমার পক্ষে শাস্তি কমানোর আবেদন মানে, এখনই জাতীয় দলে ফেরার অবারিত সুযোগের আবেদন এবং ২০১৭ সালের বিপিএল খেলার অনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ’
আগামী বছর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন আশরাফুল। জাতীয় লিগ ও প্রিমিয়ার লিগে এবার ভালো পারফরমেন্স না করার পেছনে প্রস্তুতির ঘাটতিকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
আশরাফুলের ভাষ্যমতে, ‘আমি অপেক্ষায় আছি আগামী বছরের। তাই এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রায় প্রতিদিনই শেরে বাংলার ইনডোর ও একাডেমি মাঠে অনুশীলনে যাচ্ছি। গত বছর জাতীয় লিগ আর এবার প্রিমিয়ার লিগ খেললেও তেমন ভাল খেলতে পারিনি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে হয় প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। আমার বন্ধু স্থানীয় জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার এবং কোচ ও সুহৃদ শুভানুধ্যায়ী সবাই বলেছেন, তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যতটা শারীরিক ও ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা উচিৎ ছিল। আমি তা করতে পারিনি। সে বোধ ও উপলব্ধি থেকেই এবার অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’
আশরাফুল আশাবাদী, নিয়মিত পারফর্ম করতে থাকলে একদিন না একদিন আশা পূরণ হবেই। ৩৩ বছর বয়সেও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠ মাতাতে চান তিনি। এই বয়সে তার অনুপ্রেরণা মিসবাহ উল হক- ইউনিস খানরা।
আশরাফুলের মতে, ‘আশা করছি দীর্ঘ সময় নিবিড় অনুশীলন করতে পারলে আগামী বছর পারফরমেন্স হবে আরও ভাল। আর আগেও বলেছি, এখনই জাতীয় দলে ফেরার কথা ভাবছি না। আমার বয়স ৩৩ প্লাস। এরচেয়ে চার পাঁচ বছর বেশি বয়সেও ইউনুস খান আর মিসবাউল হকরা খেলেছেন। মাঠ মাতিয়েছেন। সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, তারা পারলে আমি কেন পারবো না? সে লক্ষ্যেই এগুচ্ছি। দেখা যাক কি হয়!’