আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরাইল সফরে ৭টি চুক্তি সই হয়েছে। তাতে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। তবে চুক্তি সইয়ের পর তারা যৌথ ঘোষণায় যা বলেছে তাতে এশিয়াকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের কথা বলে মূলত পাকিস্তানকেই টার্গেট করা হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে কাশ্মীরিদের ওপর নতুন খড়গ নেমে আসতে পারে সেই ইঙ্গিতও মিলছে তাতে।
ভারত-ইসরাইলের রাষ্ট্রনেতাদের উষ্ণতার এমন প্রকাশ্য প্রদর্শন এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ভারত ও ইসরাইলের এই বিবাহ স্বর্গে রচিত হয়েছিল, বাস্তবায়ন হল মর্ত্যে!’ পাশে দাঁড়িয়ে মধুরতর স্বরে মোদী পাল্টা বলেছেন, ‘গতরাতের নৈশাহারে প্রধানমন্ত্রী তার পরিবার ও পিতা সম্পর্কে যা বলেছেন, এই সুন্দর দেশ সম্পর্কে আমার ধারণাটাই তাতে অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।’
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, তারা যে যৌথ বিবৃতিটি ঘোষণা করেছেন, তাতে কিন্তু নাম না করে সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, তাদের নেটওয়ার্ক এবং যারা এই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়, তাদের আর্থিক সাহায্য করে সমর্থন জোগায়,তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উপরে দুই রাষ্ট্রনেতাই জোর দিয়েছেন।’
এখানেই না থেমে যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসের কোনও যুক্তি বা ব্যাখ্যা হয় না, তা সে যে ভাবেই দেখা হোক না কেন।’ কার্গিল যুদ্ধের সময় থেকেই তেল আবিবের সঙ্গে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রশ্নে হাতে হাত মিলিয়ে চলছে নয়াদিল্লি। কিন্তু তা কখনোই এ ভাবে বিজ্ঞাপিত হয়নি। আজ আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে যখন ভারত কোণঠাসা, কাশ্মীর যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময়ে ইসরাইলের মাটিতে দাঁড়িয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই যৌথ যুদ্ধ ঘোষণা ইসলামাবাদকে কিছুটা চাপে ফেলবে বলে আশাবাদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ইসলামাবাদ সরকারি ভাবে কোনো মন্তব্য না করলেও মঙ্গলবার থেকেই ইসরাইল-ভারতের এই বন্ধুত্ব নিয়ে সরগরম পাক সংবাদমাধ্যম। আজই আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘নাসের’-এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান।
ইসরাইল-ভারতের মধ্যে আজ যে সব চুক্তি হলো-
• যৌথ শিল্প গবেষণা এবং প্রযুক্তির তহবিল, জল সংরক্ষণ,জলের ব্যবহার সংক্রান্ত সংস্কার, কৃষিক্ষেত্রে আগামি তিন বছরের উন্নয়নক্ষেত্রে সহযোগিতা, অ্যাটমিক ক্লক উৎপাদনে সহযোগিতা,অপ্টিকাল লিঙ্কে সহযোগিতা, উপগ্রহ নির্মাণক্ষেত্রে সহযোগিতাG
এর আগে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ভারতকে যে সহযোগিতা করেছে, আজকের সিলমোহরের পরে সরকারিভাবে তা বেশ কয়েক গুণ বাড়বে বলেই সূত্রের খবর।
মূলত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এবং কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা এবং প্রতিরক্ষাকর্মীদের সঙ্গে এবার দেখা যাবে ইজরাইলি প্রযুক্তি,প্রশিক্ষণ এবং মোসাদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিও। এই নিয়ে দুই নেতার একান্ত বৈঠকে সবিস্তার কথা হলেও, স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খোলেননি তারা। সন্ত্রাস এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কথা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সাইবার সন্ত্রাস, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যৌথ উৎপাদন, ইসরাইলের উচ্চ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভারতে হস্তান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। যৌথ বিবৃতিতেও এই সব বিষয় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘ভারত এবং ইসরাইল দু’দেশই জটিল ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে। আমরা জানি যে সুস্থিতি এবং অঞ্চলের শান্তিকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের ঘৃণা ও হিংসার ভুক্তভোগী ভারত এবং ইজরায়েল। আমি এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত রোধে আরো বেশি সহযোগিতা করার প্রশ্নে একমত।’ তার পাশে দাঁড়িয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আমরা দু’দেশই সন্ত্রাসবাদের শিকার। গোটা বিশ্বের শান্তি ও সুস্থিতির জন্য এবার আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাস বিরোধিতার প্রতীকী ছবিও আজ নিপুণভাবে তৈরি করেছে ভারত। ন’বছর আগের মুম্বাই সন্ত্রাসে নিহত ইসরাইলি দম্পতির সন্তান এগারোর বছরের মোশে হোলৎসবার্গের সঙ্গে আজ দেখা করেন মোদী। তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত। নেতানিয়াহু বলেন, ‘বালক মোশে-র সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা শুভ শক্তিকে রক্ষা করার জন্য একসঙ্গে লড়ব।’