গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জেলার চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত ১৯৪ গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ আবাদি জমি থেকে প্রতিদিনই পানি নেমে যাচ্ছে। বানভাসী মানুষ নতুন করে তাদের ঘরবাড়ি ও বাড়ির উঠান মেরামত করতে শুরু করেছেন। তবে পানিবন্দি আড়াই লাখ মানুষের অনেকেই এখনও খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছেন।
দুর্গতদের মধ্যে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্রক্ষপুত্র নদের পশ্চিম তীরের উচু বাঁধ ও রেলের জায়গায় আশ্রয় নেওয়া শত শত পরিবার। এসব পরিবারে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পয়ঃনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এসব মানুষ আরও বিপাকে পড়েছেন। অনেকের মধ্যে পানিবাহিতসহ বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ছড়িয়েও পড়লেও মিলছে না পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা।
কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসী ঘাটের রেলের জমিতে আশ্রয় নেওয়া জোহরা বেগম বলেন, ‘বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে রেলের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। থাকার মতো খড়ের ছাপড়া তুলে তার মধ্যে হাঁস-মুরগিসহ স্বামী সন্তান নিয়ে থাকতে হচ্ছে। হাতে টাকা আর কাজকর্ম না থাকায় চাল, ডাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’
আমেনা বেগম বলেন, ১৫ দিন ধরে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি। এমনকি কেউ খোঁজ খবরও নেয়নি তাদের। বিশুদ্ধ পনি, খাবার ও পয়নিস্কাশননের অভাব থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। কোন রকম এক বেলা দুমুঠো ভাত জুটলেও কপালে জোটেনা তরকারি। এ কারণে আলু ভর্তা, কচু ভর্তা, পাট শাক যাই পাওয়া যাচ্ছে তাই দিয়ে ভাত খেতে হচ্ছে।’
আনোয়ার হোসেন নামে আরও একজন বলেন, বন্যা আর নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। রেলের জায়গায় গরু, ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এভাবে এখানে কতদিন থাকতে পারবো তাও জানি না।’
এবারের বন্যায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পনিবন্দি হয়ে পড়েন। কয়েকদিন ধরে পানি কমা শুরু করলেও এখনও অধিকাংশ লোকজন পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার পনিতে ডুবে ইতোমধ্যে জেলার চার উপজেলার বিস্তীণ জমির ফসল পচে নষ্ট হয়েছে। চার উপজেলায় বন্যায় অনন্ত ৫০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া পুকুরের মাছ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির শিকার হয়েছেন বানভাসীরা।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবদুল হালিম টলষ্টয় বলেন, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা অব্যহত রয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের সহায়তা করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে।