
তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন, শাশুড়ি রুমী বেগম এবং স্ত্রীর বোন পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি -ছবি আরটিএনএন
বগুড়ায় মেয়েকে ধর্ষণের পর বিচারের নামে মা-মেয়েকে নির্যাতনের মামলায় ধর্ষক শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন, শাশুড়ি রুমী বেগম এবং স্ত্রীর বোন পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকিসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
রবিবার সন্ধ্যায় পাবনা ও ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হয় বলে জানা গেছে। মা-মেয়েকে নির্যাতনের মামলায় এ নিয়ে মোট ৯জনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, কাউন্সিলর রুমকি ও তার মা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে পাবনা মেডিকেল কলেজের পাশের একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। সংবাদ পেয়ে বগুড়া থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। রুমকি ঘটনার মূল হোতা তুফান সরকারের স্ত্রী আশার বড় বোন।
অন্যদিকে রবিবার দিবাগত রাতে একই মামলার আসামি জিতু, মুন্না ও ধর্ষক তুফানের আশা খাতুনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বগুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে পুলিশ তুফানের স্ত্রীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ বলছে, তুফানের স্ত্রী গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকা আসছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে তারা মহাসড়কে তল্লাশি চালায়। ওই অভিযানে রাতে সন্দেহভাজন একটি গাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের রাতেই বগুড়া নিয়ে যায় পুলিশ।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, ধর্ষণের ঘটনার পর গত শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতা ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির অফিস চকসুত্রাপুরে নিয়ে যায়। সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে পতিতা আখ্যায়িত করে এবং মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয়। এরপর তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী লাঠিপেটা করে মা ও মেয়েকে।

ধর্ষক তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন ও অন্য দুইসহযোগী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার
এরপর তারা নাপিত ডেকে এনে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রিকশায় তুলে দেয়া হয়। ওই অবস্থায় তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। রাত ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে গিয়ে মা ও মেয়ের বক্তব্য শুনে রাতেই অভিযান শুরু করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার আরো তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে তুফান সরকারকে গ্রেপ্তারের পর পরই তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর রুমকি এবং তুফানের শাশুড়ি রুমী বেগমসহ অন্য সহযোগীরা আত্মগোপন করে। শনিবার এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় রবিবার গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিক লীগের ৪ নেতাকর্মীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।