গোবিন্দগঞ্জ ( গাইবান্ধা ) প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে শিউলি বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এ আত্মহত্যা নিয়ে আব্দুস সামাদ নামে এক ব্যক্তি বানিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি নিহত শিউলি বেগমের বড় দুলাভাই।
আব্দুস সামাদ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের ভোলা শেখের ছেলে। তিনি পেশায় একজন গরু ব্যবসায়ী। তাছাড়াও মাঝে-মধ্যে আব্দুস সামাদ মাংশের ব্যবসাও করে থাকেন। এ সব ব্যবসার আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সামাদ শেখ জানান, নিহত শিউলি বেগম আমার ছোট শালীকা। তাকে পারিবারিক কলহের জের ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি কোন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা থেকে পরের দিন শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ আত্মহত্যা নিয়ে চলে দর কষাকষি । এ সময় সামাদ ৩ লক্ষ টাকার দাবি করেন। আর অপরপক্ষ ১ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হন। দাবিকৃত অর্থ না পাওয়ায় তিনি অবশেষে শ্বশুড় রজ্জব আলীকে দিয়ে নিহত শিউলির স্বামী ও দেবরের নিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা করান।
নিহত শিউলি বেগম উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের সাজু মিয়ার স্ত্রী এবং একই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের দিনমজুর রজ্জব আলীর মেয়ে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রেজাউল এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তা ছাড়াও নিহত শিউলি বেগমের প্রথমা মেয়ে সানজিদা খাতুন (১০) মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
সানজিদা খাতুন জানান, তার মা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাত টার দিকে আত্মহত্যা করার জন্য শয়ন ঘরের মধ্যে গ্লাসে বিষ ঢেলে জল চকির নিচে রাখেন। বিষয়টি টের পেয়ে সে গ্লাসে রাখা বিষ বাইরে ফেলে দেয়। এ কারনে তার মা তাকে বকা চকাসহ মারধর করায় সে কেঁদে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিষয়টি প্রতিবেশি এক দাদীকে জানায়। এর কিছুক্ষন পর শিউলি বেগম বিষপান করেন। আত্মহত্যার নেপথ্যে জানা যায়, কয়েকদিন আগে প্রতিবেশি জুলফিকারে স্ত্রী শিল্পী বেগমের সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া হয়।
এ সময় শিল্পীর পক্ষের লোকজন শিউলিকে অপমান-অপদস্ত সহ শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। শিউলি এর বিচার চেয়ে বিষয়টি তার স্বামী সাজু মিয়াকে জানান। কিন্তু সাজু মিয়া একা হওয়ায় এর প্রতিবাদ করতে পারেনি। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও মার খেতে হবে, এমন কথা মনে করে প্রতিবাদ না করায় শিউলি বেগম ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে তিনি বিষ পান করেন। এ প্রসঙ্গে কথা বলা হলে শিল্পী বেগম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
সাজু মিয়া বিষয়টি টের পেয়ে শিউলি বেগমকে রাতেই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ভর্তি করান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময় শিউলি বেগম মারা যান। এ দিকে গোবিন্দগঞ্জ থানার এস আই নূরুন্নবী অদৃশ্য কারনে সাজু মিয়াকে গ্রেফতার করে গতকাল শনিবার আদালতের মাধ্যমে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে প্রেরন করেন। এ ঘটনায় থানা এস আই নুরুন্নবীর ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাদী পক্ষের চাপের কারনে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান পিপিএম জানান, তিন লাক্ষ টাকা দাবি করার বিষয়টি তার জানা নেই। স্বামী ও দেবরের প্ররোচনায় শিউলি বেগম আত্মহত্যা করেছে মর্মে নিহতর বাবা রজ্জব আলীর স্বাক্ষরিত মামলা পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়মিত মামলা হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং সকল প্রশ্নের অবসান ঘটবে।