এটিএম আফছার আলী, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অপহৃরণ মামলার আসামী পুলিশের হাত থেকে সুকৌশলে পালানোর সময় ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে পাশর্^বর্তী পলাশবাড়ীর উপজেলার জুনদহ বাজার এলাকায়। সুন্দরগঞ্জ থানায় দায়ের করা অপহৃরণ মামলার আসামী রিপন চন্দ্র দাসকে বগুড়া জেলার কাহালু থানা হতে পুলিশের গাড়িতে করে সুন্দরগঞ্জে নিয়ে আসার সময় প্রকৃতির ডাকে রিপন চন্দ্র দাসের প্র¯্রাবের চাপ দেয়। পুলিশ তাকে জুনদহ বাজার নামক স্থানে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশে প্র¯্রাব করানোর জন্য নামায়। এসময় তার হাতে হ্যান্ডকাপ ছিল। প্র¯্রাব করার একপর্যায় রিপন দৌড়য়ে পালানো চেষ্টা করে। এরই একপর্যায় বগুড়া হতে রংপুরগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পলাশবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র দাসের কন্যা চৌধুরী বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রীকে বিকালে হাতিয়া চৌরাস্তা মোড় হতে একই গ্রামের বাবলু চন্দ্র দাসের ছেলে রিপন চন্দ্র দাস অপহৃরণ করে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর তাকে না পাওয়ায় সুরেশ চন্দ্র দাস ৫ জনকে আসামী করে থানায় অপহৃরণ মামলা করে। সুন্দরগঞ্জ থানার মামলা নং-০১/১৭, তারিখঃ ০১/০৬/২০১৭ইং। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- বাবলু চন্দ্র দাস, ষষ্ঠী চন্দ্র দাস, সুযোকী রানী, গোলাপী রানী। মামলা সূত্রধরে বিভিন্ন থানার পুলিশ তাদেরকে খুঁজতে থাকে। খোঁজ পেয়ে বগুড়া কাহালু থানার পুলিশ রিপনের মামার বাড়ি থেকে সুরেশের কন্যাসহ রিপনকে আটক কাহালু থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টি সুন্দরগঞ্জ থানাকে অবহিত করালে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা-এসআই রাজু মিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কাহালু থানা হতে আসামী রিপনসহ সুরেশের কন্যাকে নিয়ে আসার সময় নিহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পলাশবাড়ি থানায় সড়ক দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে। সুরেশের কন্যা বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ থানায় অবস্থান করছে। তার নিকট থেকে জানা গেছে, কাহালু থানায় রিপনের মামার বাড়ি সংলগ্ন একটি মন্দিরে তাদের মালা বদল হয়েছে। তিনি আরও জানান-দীর্ঘ দেড় মাস থেকে রিপন তাকে স্কুল যাওয়া-আসার পথে কু-প্রস্তাব দিতো। ইতিমধ্যে সুরেশের কন্যার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়েছে এবং বরপক্ষ তাকে আর্শীবাদ করে গেছে। এ খবর পেয়ে রিপন তাকে অপহৃরণ করে নিয়ে যায়। রিপনের বাবা বাবলু চন্দ্র দাস ও তার ছোট ভাই পন্ডিত চন্দ্র দাসের দাবি পুলিশের হেফাজতে রিপন নিহত হয়েছে। পুলিশ সু-কৌশলে রিপনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে যার কারণে রিপন মারা যায়। তারা আরও বলেন-পুলিশ রিপন হত্যার ঘাতক ট্রাককে কেন আটক করলো না। গাইবান্ধায় ময়না তদন্ত শেষে রিপনের লাশ শুক্রবার বাদ জুম্মা হাতিয়া গ্রামে নিয়ে আসা হয়। অপরদিকে রিপনের পরিবারের লোকজন সুরেশ চন্দ্রের ঘর-বাড়ি ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থালে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এলাকায় থতথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান-গোলাম মোস্তফা রাজু জানান- অপহৃরণের বিষয়টি মিমাংসার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ছেলে মেয়ে না পাওয়ায় মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি। অনাকাঙ্খিত এই ঘটনার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান- ভিকটিমসহ আসামী পুলিশ পাহাড়ায় বগুড়ার কাহালু থানা হতে সুন্দরগঞ্জে নিয়ে আসার পথে পলাশবাড়ির গুপিনাথপুর মৌজায় প্রস্রাব করার কথা বলে বগুড়া-রংপুর সড়কের পাশের নেমে আসামী সু-কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রিপন মারা যায়। আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম তাকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু পারিনি।