
প্রাথমিক স্তর থেকেই জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করতে ব্যর্থ হলে গৃহস্থালি ও ব্যবসায়ীদের জরিমানা করার বিধান রেখে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’র খসড়া তৈরী করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হোসাইন বাসসকে বলেন “আমরা ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’ অনুযায়ী নীতিমালার খসড়া তৈরী করেছি। নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খসড়া নীতিমালাটি আমরা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো”।
জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করা বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় একটি বিধান রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যদি কেউ এই দুটি বর্জ্য আলাদা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে। এবং একই কাজ পুনরায় করলে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
জিয়াউল হোসাইন বলেন, বর্জ্য রিসাইক্লিং করতে, গৃহস্থালির মতো প্রাথমিক স্তর থেকেই জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার স্লোগান নিয়ে বর্তমান সরকার দেশে কার্যকর ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম’ তৈরী করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে, বর্জ্যকে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা বর্জ্য রিসাইক্লিং করতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বলেও তিনি জানান।
দেশে কার্যকর রিসাইক্লিং শিল্প গড়ে তুলতে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে’র অধীনে ‘৩-আর প্রকল্প’ ও ‘৬৪ জেলায় কমপোস্টিং’ প্রকল্পসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আরো বলেন, “পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয় খসড়া নীতিমালাটি হাতে পাওয়ার পর আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা করে নীতিমালাটি পর্যালোচনা করবে। আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় পর্যালোচনার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এটিকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে”।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী যদি গৃহস্থালী থেকে জৈব বর্জ্য যেমন, রান্না ঘরের আবর্জনা এবং অজৈব বর্জ্য যেমন কাগজ, প্লাস্টিক, কাঁচ, কাপড়, রাবার এবং কাঠের আসবাবপত্র তাদের ঘর থেকেই আলাদা না করে, তাহলে গৃহস্থালীর মালিককে জরিমানা করা হবে। তাঁদেরকে জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা দুটি পাত্রে ঘরের সামনেই রাখতে করতে হবে।
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে, নির্মাণকাজের আবর্জনা নির্মাণ কাজের এলাকার মধ্যেই সংরক্ষণ করতে হবে। যতক্ষণ না সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য সংগ্রাহকরা এটি সংগ্রহ করে। যদি নির্মাণ কাজের আবর্জনা নির্মাণ সাইটের বাইরে সরানো হয়, তাহলে কন্ট্রাক্টর বা নির্মাণ এলাকার মালিককে জরিমানা করা হবে।
ফুটপাতের বিক্রেতা, দোকান এবং রেস্টুরেন্টেকেও প্রাথমিক স্তর থেকেই জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করতে হবে। এবং আলাদা দুটি পাত্রে রাখতে হবে। যদি তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে প্রথমবার সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা এবং একই কাজ পুনরায় করার জন্য সর্বোচ্চ ৪,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
রিসাইক্লিং বিশেষজ্ঞ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েস্ট কনসার্নে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদ সিনহা পরিবেশ অধিদপ্তরের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাসসকে বলেন, “কৃষি ক্ষেত্রে সারের চাহিদা পূরণ করতে, বর্জ্য ব্যবহার করে সারা দেশে সার উৎপাদন কেন্দ্র তৈরী করাই আমাদের লক্ষ্য”।
খসড়া আইনে জরিমানা করার বিধানকে ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে সিনহা বলেন, যদি জনগণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন না হন, তাহলে শুধু আইন আর জরিমানা করে এর কোনো সমাধান করা যাবে না।
বর্তমানে প্রায় ৪৫০০ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এক্ষেত্রে পূর্ণ সফলতা পেতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণকে সম্পৃক্তকরণ ও এ বিষয়ে ব্যবপক সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সিনহা।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে কার্যকর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরী করতে, আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনসম্পৃক্ততা সমান গুরুত্বপূর্ণ।সূত্র- বাসস