খবরবাড়ি ডেস্কঃ মহান স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কৃতি সন্তান ড. মোহাম্মদ হোসেন মন্ডল স্বরণে শোক সভা-দো’আ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সদরের হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ইফতার পূর্ব শোক সভায় আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন। শোক সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান, সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, রফিকুল ইসলাম ভিপি, সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম সরকার লিপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সাবেক সহকারী শিক্ষা অফিসার আবেদ মো. সেলিম, মরহুম ড. মোহাম্মদ হোসেন মন্ডলের বড় ছেলে ব্যবসায়ী মোমতাছলিম মন্ডল শাহীন, পুত্রবধু লুনা বেগম, নাতনী নাবিলা ও নাদিয়া প্রমুখ। আয়োজকদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় কাউন্সিলার ডা. এসআইএম শাহীন, গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর মাহবুব আলম ও পলাশবাড়ী উপজেলা যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাকিম সরকার বাবলা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন মরহুমের ভাগ্নে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মাহিবুল হাসান মুকিত।
উল্লেখ্য, ড. মোহাম্মদ হোসেন মন্ডল ১৯ জুন সন্ধ্যায় সোয়া ৭টায় ঢাকা হার্ডফাউন্ডেশনে ইন্তেকাল করেন। তিনি গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে মহান স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের হাতে পদক তুলে দেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বুজরুক টেংরা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মোহাম্মদ হোসেন মন্ডল ১৯৩৬ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম গরিবুল্লা মন্ডল। ৫ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন মন্ডল সবার বড়।
ইতোপূর্বেই তার স্ত্রী মারা যান। বড় ছেলে বাবা মোহাম্মদ হোসেন মন্ডলের সঙ্গেই থাকতেন। তার ছোট ছেলে চিকিৎসক শিবলি স্ত্রীসহ জাপান থেকে পিএইচডি করে কানাডায় বসবাস করেন। মোহাম্মদ হোসেন মন্ডল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে পুরাতন বিদ্যাপীঠ বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি, রাজশাহী গর্ভমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বিএস-সি পাস করেন। পরে তিনি ঢাকাস্থ তদানীন্তন শেরেবাংলা কৃষি কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে বিএজি পরীক্ষায় প্রথম স্থান এবং ১৯৬২ সালে এমএজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রপফিজিওলজিতে এমএস এবং ১৯৭২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭২-৭৭ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি ও মিনিসোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. মোহাম্মাদ হোসেন মন্ডল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (গবেষণা) পরিচালক পদে ৮ বছর এবং মহাপরিচালক পদে ৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন জার্নালে এ যাবৎ তাঁর ৫০টি গবেষণামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গম, ভুট্টা, তৈল-বীজ, ডাল, আলু, মিষ্টি আলু, তুলা, সবজি এবং মশলা জাতীয় ফসলের বেশকিছু নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ তত্ত্বাবধান করেন। তিনি নিরলস কৃষি গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে কিৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গবেষকদের মধ্যে কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংযোগ স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি কৃষি খাতে রিসার্চ রিভিউ সিস্টেম প্রবর্তন করেন। যা কৃষি গবেষণার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
ড. মোহাম্মাদ হোসেন মন্ডল দেশ ও বিদেশে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৫-৮১ সাল আমেরিকান সোসাইটি অব এগ্রোনমি ও ক্রপসায়েন্স সোসাইটি অব আমেরিকা, ১৯৮৮-৯০ মেয়াদে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিড পলিসি ফরমেশন কমিটি এবং ১৯৯০-৯৩ মেয়াদে টেকনিক্যাল এডভাইজরি কমিটি, সিজিপিআরটি সেন্টার, ইন্দোনেশিয়ার সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৬-৯২ মেয়াদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ) সিন্ডিকেট সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষিতত্ত্ব সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যায়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের শিকাগো শাখার সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ড. মোহাম্মদ হোসেন মন্ডল তার বড় ছেলে শাহিন, পুত্রবধু লুনা ও নাতী-নাতনীকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতেন। তিনি জীবদ্দশায় বে-সরকারি সংস্থা (এনজিও) পদক্ষেপ-এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।