এটিএম আফছার আলী, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ আট জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছয়টি প্রকল্পের বিপরীতে ২৩ লাখ ৫ হাজার ২৮৮ টাকা আত্মসাত করার দায়ে মামলা করেছে। রংপুর জেলা সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার বৃহস্পতিবার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় পৃথক ছয়টি মামলা করে।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী মশিউর রহমান প্রধান, সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ একেএমএ হাবীব সরকার, দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা গ্রামের হাফিজার রহমান চৌধুরীর ছেলে আ’লীগ নেতা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী সুজা, আলমগীর হোসেন চৌধুরী মিলন, লখিয়ারপাড়া গ্রামের আলেফ উদ্দিনের ছেলে হরিপুর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মঞ্জুরুল হক, গাইবান্ধা পৌর সভার জহুরুল হকের ছেলে ভবন সংস্কার ঠিকাদার মাসুদুল হক, ফতেখাঁ গ্রামের সৈয়দ বদিউল কারিমিনের স্ত্রী সিপিপিসি’র সভাপতি নাসরিন আক্তার। প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিশেষ বরাদ্দের, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষন (কাবিখা) কর্মসূচি, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচি, ভবন সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্প ও হতদরিদ্র বিদ্যুৎ বিহীন গরীব মেধাবি শিক্ষার্থীদের সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের জন্য সোলার স্থাপন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা ভেকির বাজার হতে চৌধুরী বাড়ি হয়ে কামারপাড়া রেল স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের বিপরীতে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সংস্কার প্রকল্পের ২৬.১৪ ভাগ হিসাবে ৫.২২৮ মেট্রিক টন চালের কাজ না করে তৎকালিন চালের সরকারি মূল্য অনুযায়ী ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৮১ টাকা আত্মসাত করে। প্রকল্প কমিটির সভাপতি ছিলেন প্রয়াত এমপি মঞ্জুুরুল ইসলাম লিটনের পিএস জাহাঙ্গীর চৌধুরী সুজা।
উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা আলমগীর হোসেনের বাড়ি সংলগ্ন পাকা রাস্তা হতে লেংগা খাল ফুট ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার প্রকল্পের জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সংস্কার প্রকল্পের ১৫.৮৬ ভাগ হিসাবে ৬.৩০৪ মেট্রিক টন চালের কাজ না করে তৎকালিন চালের সরকারি মূল্য অনুযায়ী ২ লাখ ৩১ হাজার ১৩২ টাকা আত্মসাত করে। প্রকল্প কমিটির সভাপতি ছিলেন আলমগীর হোসেন চৌধুরী মিলন।
হরিপুর ইউনিয়নের পাড়া সাদুয়া শাহ আলমের বাড়ি হতে আব্দুল মান্নানের জমি পর্যন্ত রাস্তা কাম বাধ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কাবিটা সংস্কার প্রকল্পের ৬৭.৮ ভাগ হিসাবে কাজ না করে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ১২০ টাকা আত্মসাত করে। প্রকল্প কমিটির সভাপতি ছিলেন আ’লীগ নেতা মঞ্জুরুল হক।
গাইবান্ধা জেলা পরিষদ হতে সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ ডিগ্রী কলেজের ভবন সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্প কাজের জন্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। সংস্কার প্রকল্পের ৫১.৫৪ ভাগ হিসাবে কাজ না করে ৬ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৫৫ টাকা আত্মসাত করে। প্রকল্প ঠিকাদার ছিলেন- মাসুদুল হক। কলেজের অধ্যক্ষ একেএমএ হাবীব সরকার সম্পূর্ণ টাকার কাজ হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করায় তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
তারাপুর ইউনিয়নে হতদরিদ্র বিদ্যুৎ বিহীন গরীব মেধাবি শিক্ষার্থীদের সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের বিপরীতে সোলার স্থাপন প্রকল্পের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সোলার প্যানেল সরবরাহ না করে ভূয়া/জাল মাস্টার রোল প্রস্তুত করে ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্মসাত করে জেলা পরিষদের উপ- সহকারি প্রকৌশলী মশিউর রহমান প্রধান।
এবং চন্ডিপুর ইউনিয়নে হতদরিদ্র বিদ্যুৎ বিহীন গরীব মেধাবি শিক্ষার্থীদের সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের জন্য সোলার স্থাপন প্রকল্পের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। আংশিক সোলার প্যানেল সরবরাহ করে বাকি সোলার প্যানেল সরবরাহ না করে ভূয়া/জাল মাস্টার রোল প্রস্তুত করে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা আত্মসাত করেন সিপিপিসি’র সভাপতি নাসরিন আক্তার।
১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন আইন ৫(২) ধারায় পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণা মুলকভাবে জাল স্বাক্ষরে ভুয়া প্রকল্প কমিটি গঠন করে টাকা আত্মসাত করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ডি ডব্লিউ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ একেএমএ হাবীব সরকার জানান- প্রকল্পের কাজ ঠিকাদার করেছেন। আমি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি মাত্র। টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি জানি না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার জানান- শতভাগ কাজ নিশ্চিত হওয়ার পর প্রকল্পের বরাদ্দ ছাড় করা হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর পর মাটির কাজের পরিমাণ নির্ধারণ করলে পূর্বের তুলনায় হেরফের হবে। বৃষ্টি-বাদল এবং বন্যায় মাটি খুঁয়ে যাওয়ার কারণে দীর্ঘদিন পর মাটির হিসাব-নিকাশ ঠিক থাকবে না। অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা । প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিরাই ভাল জানেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম গোলাম কিবরিয়া জানান-দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিষয়টি আমি জেনেছি। আইন সবার জন্য সমান। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।