
নগরবাসীর শতভাগ সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলছে। ইতোমধ্যে মধ্যে এই প্রকল্পের বিভিন্ন ধাপে গড়ে অন্তত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সংশি¬ষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি চালু হলে প্রতিদিন ১১কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ওয়াসার এ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৭ জুন একনেকে অনুমোদন মেলে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারন করা হয় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এসব টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) ফান্ড ৭৫০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র ৫২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও জাইকা’র ১ হাজার ২৮৪ কোটি ১২ লাখ ৭৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহের পর তা পরিশোধনের মাধ্যমে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে সরবরাহ করা হবে। মধুমতি নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত এ পানি খুলনা শহরের ৩৩ কিলোমিটার দূরে রূপসার সামন্তসেনা নামক স্থানে পরিশোধন করা হবে। সেখানে গড়ে দৈনিক ১১ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শোধনাগারের পাশাপাশি অপরিশোধিত পানি সংরক্ষণের জন্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এক থেকে ২ সপ্তাহ মধুমতির পানি কিছুটা লবণাক্ত হয়ে পড়ে। সে সময় জলাধারের পানি পরিশোধন করে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হবে।
এডিবি’র অর্থায়নে ৩টি ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রাক বিডি-আইসিবি প্যাকেজ ও ২টি ন্যাশনাল কন্ট্রাক বিডি-এনসিবি প্যাকেজ ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার এবং ১০টি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১০টি ওভারহেড ট্যাংক ও ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার নির্মাণের স্থানগুলো হচ্ছে চরেরহাট, লবণচরা, নতুন বাজার, ছোট বয়রা, রায়ের মহল, বয়রা হাউজিং এবং দেয়ানা। বাকি ৩টি ওভারহেড ট্যাংক হচ্ছে বানিয়াখামার, মিরেরডাঙ্গা এবং দৌলতপুরের পাবলা।
অপরদিকে, ‘ক্লিয়ার ওয়াটার ট্রান্সমিশন মেইনস ইনক্লুডিং রিভার ক্রসিং’র মাধ্যমে রূপসার সামন্তসেনা পানি শোধনাগার থেকে রূপসা নদীর তলদেশ হয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি রিজার্ভার পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো হবে। এসব লাইনে ৩শ’ মিঃমিঃ থেকে ১২শ’ মিঃমিঃ ব্যাসের ৩৩ কিঃমিঃ ডাকটাইল আয়রন পাইপ ও মাঠ পর্যায়ে পাইপ বসানোর কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া ‘ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ নেটওয়ার্ক’র মাধ্যমে পাইপ লেয়িং’ কাজও শুরু হয়েছে। এ কাজের আওতায় সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন ব্যাসের প্রায় ৬৫০ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো সম্পন্ন হয়েছে। যার মাধ্যমে সকল গ্রাহকদের সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। ২০১৮ এর মার্চ এর মধ্যে এ কাজটি সমাপ্ত করা হবে।
প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যেই নগরীর সাত নম্বর ঘাট এলাকায় রেলওয়ের জমিতে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতাধীন খুলনা ওয়াসার ১০ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট (প্রথম পর্যায়ে ৬ তলা) প্রধান ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ওই ভবনে বর্তমান দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশ্বরপাশা ও চরেরহাট এলাকায় ২টি জোনাল বিল্ডিং নির্মাণের কাজের ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।
অন্যদিকে, জাইকার অর্থায়নে ‘ইমপাউন্ডিং রিজার্ভার অ্যান্ড সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬ান্ট’ প্যাকেজের আওতায় রূপসা উপজেলার তিলক ও পাথরঘাটা নামক স্থানে ১১০ লাখ লিটার (এমএলডি) ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার এবং ইমপাউন্ডিং রিজার্ভার নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ কাজের ৪৫ শতাংশ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া ‘ওয়াটার ইনটেক ফ্যাসিলিটি অ্যান্ড র’ ওয়াটার ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন’ প্যাকেজে মোল¬াহাট ব্রীজ সংলগ্ন মধুমতি নদীর পাড়ে (ইনটেক স্ট্রাকচার অ্যান্ড পাম্প হাউজ) নির্মাণ কাজের ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহমেদ বলেন, খুলনা শহরের সুপেয় পানির সঙ্কট দীর্ঘদিনের। এ সঙ্কট নিরসনের লক্ষে এ নগরীর ‘সবচেয়ে বড়’ এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে গড়ে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের সকল কাজ সম্পন্ন হবে। আর এ প্রকল্প চালু হলে নগরীতে প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে।সূত্র- বাসস