“আচ্ছা, সালমান আবেদি কি এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসতেন?” “এটা কি ঠিক যে তার বাবা এখানে মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন?” শত শত ইলেকট্রনিক ফ্ল্যাশ বাল্বের ঝলকানির মধ্যেই প্রশ্নগুলো ধেয়ে এল ঝড়ের মতো।
ম্যাঞ্চেস্টার ইসলামিক সেন্টারের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ফাওজি হাফার ততক্ষণে সবেমাত্র তার বিবৃতিটি পড়া শেষ করেছেন। কিন্তু সকাল থেকে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত সাংবাদিকদের তখন আর তর সইছে না।
কিন্তু সে সব কোনও প্রশ্নেরই উত্তর মিলল না ডিডসবারি মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। তারা সটান জানিয়ে দিলেন, দুপাতার সংক্ষিপ্ত বিবৃতির বাইরে তারা আর কিছু বলবেন না – কোনও প্রশ্নেরও জবাব দেবেন না!
সারা দিন ধরে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ততক্ষণে তুমুল জল্পনা চলছে, এই ডিডসবারি মসজিদেই না কি নিয়মিত আসত ম্যাঞ্চেস্টার এরিনার সন্দেহভাজন আত্মঘাতী হামলাকারী সালমান আবেদি।
এমন কী তার বাবা সেখানে বেশ কিছুদিন মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন, সেটাও ততক্ষণে জানিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম।
কিন্তু প্রায় শদুয়েক সাংবাদিককে প্রায় সারাদিন অপেক্ষা করিয়ে বিকেল চারটে নাগাদ মসজিদ কর্তৃপক্ষ যখন অবশেষে বাইরে এলেন, এসব কোনও প্রশ্নেরই নির্দিষ্ট উত্তর মিলল না তাদের কাছ থেকে।
বিবৃতিতে তারা শুধু এটুকু জানালেন, সালমান আবেদি কখনওই ওই সেন্টারের কর্মী ছিলেন না। ডিডসবারি মসজিদের দরজা যে মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্যই খোলা, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তারা।
আর তার সঙ্গে সোমবার রাতের আত্মঘাতী হামলার নিন্দা করে প্রত্যাশিত বিবৃতি। “ইসলামে এ ধরনের জঙ্গী হামলার কোনও স্থান নেই, আমরাও তীব্র ভাষায় এর কঠোর নিন্দা করছি”, সেই বিবৃতিতে বললেন ডিডসবারি কর্তৃপক্ষ।
সেই সঙ্গে সোমবার রাতে ম্যাঞ্চেস্টার এরিনাতে হামলার ঘটনার পর থেকেই শহর জুড়ে ‘হেইট ক্রাইম’ বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ, গালিগালাজের ঘটনা যে বেড়েছে সে ব্যাপারেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
যথারীতি সকাল নটা থেকে অপেক্ষা করতে থাকা সাংবাদিকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি এই রুটিন, সাদামাটা বিবৃতি।
মসজিদের সামনের ছোট রাস্তাটায় প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমের যে অজস্র কর্মী সারাদিন ভিড় করে ছিলেন, দিনের শেষে তারা এতে বেশ হতাশই হয়েছেন বলা চলে।
তার আগে সারাদিন ধরে তাদের বারবার জানানো হয়েছে, “এই আর একটু অপেক্ষা করুন, এক্ষুনি আমাদের ট্রাস্টিরা বিবৃতি নিয়ে আপনাদের সামনে আসবেন।”
কিন্তু সে আশ্বাস বেলা বারোটা থেকে দুটোয় গড়িয়েছে, তারপর আড়াইটে, তারপর সাড়ে তিনটে! সাংবাদিকরাও ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছেন, ম্যাঞ্চেস্টার শহরের ওই এলাকাটায় রীতিমতো যানজট তৈরি হয়ে গেছে।
ডিডসবারি মসজিদ কর্তৃপক্ষ অবশ্য দফায় দফায় পানির বোতল পাঠিয়েছেন বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জন্য, এমন কী কলার কাঁদি পর্যন্ত।
ভেতরে ম্যাঞ্চেস্টার ইসলামিক সেন্টারের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা তখনও দীর্ঘ বৈঠক করে চলেছেন, কী হবে তাদের প্রেস বিবৃতির বয়ান – কী বলবেন তারা বাইরে এসে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে।
সেই দীর্ঘ আলোচনা আর দিনভর অপেক্ষার শেষে যে বিবৃতি তারা পাঠ করলেন, তাতে অবশ্য সন্দেহভাজন হামলাকারী সালমান আবেদি-কে নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের একটা ‘ধরি মাছ না-ছুঁই পানি’ মানসিকতাই ধরা পড়ল।
বোঝা গেল, সালমান আবেদি তাদের মসজিদে নামাজ পড়তে আসতেন কি না কিংবা তাদের পরিবারের সঙ্গে সেন্টারের কোনও সম্পর্ক ছিল না – ডিডসবারি কর্তৃপক্ষ এখনও সেই উত্তরগুলো দেওয়ার মতো অবস্থায় আসতে পারেনি।
তাই দিনের শেষে ম্যাঞ্চেস্টারে সালমান আবেদিকে ঘিরে উত্তর যত না-মিলল, তার চেয়ে বেশি প্রশ্নই রয়ে গেল।সূত্র- বিবিসি