বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতি নিয়ে কোণঠাসা মমতা আরও আক্রমণাত্মক হলেন মালদা থেকে। হিন্দুত্বের জবাব দেওয়ার সঙ্গে খুললেন বিজেপিকে আক্রমণের আরও নতুন পথ।
বিজেপি-র পাতা ফাঁদে পা দিয়ে হিন্দুত্বের রাজনীতির অংশ অনেকদিনই হয়ে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি জনসভা থেকে তাঁকে বলতে হচ্ছে, তিনিই আসল হিন্দু ও বিজেপি ‘ছদ্ম হিন্দু’। আজকাল তাঁর সরকারের উন্নয়নের কথা কম, হিন্দুত্ব নিয়ে বেশি জবাবদিহি করতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
মালদার সরকারি জনসভাতেই তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ‘দিল্লি থেকে এল রাম, সাথে জুটলো সিপিএম বাম’—স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তিনি বিজেপি-র হিন্দুত্বের রাজনীতিকে আক্রমণ করেছেন।তবে বৃহস্পতিবারের সভায় মমতা তাঁর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণকে হাতিয়ার করেছেন বিজেপিকে কোণঠাসা করতে। এদিন বক্তব্য রাখার সময় মমতা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন, যখন তিনি অভিযোগ করেন, এক বিজেপি নেতাকে তিনি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে মমতার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন করতে শুনেছেন। মমতার অভিযোগ, ‘বলতে আমার লজ্জা লাগছে। আমার নামে প্রকাশ্যে বলছে, ওদের এক নেতা ভাষণ দিচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছেলে না মেয়ে না হিজড়া। আমি নিজে দেখেছি টিভিতে। এত বড় সাহস। এত বড় ঔদ্ধত্য! এত বড় অহংকার। আমার মা বাবা নিয়ে প্রশ্ন করে, আমার পিতৃ পরিচয়, মাতৃ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করে?’
উপস্থিত জনতার আবেগকে উস্কে দিতে তিনি বলেন, ‘আমার লজ্জা হয়, আমি এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি। অন্য জায়গায় হলে ফুঁসে উঠত। এদের একটা কথাও শুনবেন না।’
কিছুদিন আগেই বিজেপি-র এক রাজ্য স্তরের নেতা শ্যামাপদ মণ্ডল মমতাকে হিজরা বলে আক্রমণ করেছিলেন। নাম না করলেও সম্ভবত সেই বক্তব্যকেই হাতিয়ার করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও নারদ-সারদা নিয়ে বিজেপি যে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে, সেই প্রসঙ্গ আবারও তোলেন মমতা । তবে এবারের আক্রমণের অভিমুখ ছিল সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে। আর অস্ত্র করেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যকে। বিজয়বর্গীয় বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন সারদা ও নারদে যাঁরা অভিযুক্ত তাঁদের গ্রেফতার করে জেলে ভরতে।’
মমতা বলেন, কিছুদিন আগে একটি সংবাদপত্রে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একটি চিঠি প্রকাশিত হয়, তাতে লেখা ছিল তৃণমূলের কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তখন প্রধানমন্ত্রীর দফতর বলেছিল, ওটা সঠিক নয়।
কৈলাসের নাম না করে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘এখন বিজেপি-র একজন নেতা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি জানতে চাই, ওই চিঠিটি সত্য না বিবৃতি সত্য? আমি কৈফিয়ৎ চাই।’
রামনবমীর মিছিল, কাঁথি উপনির্বাচনে বিজেপি-র দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা, বিজেপি-র ক্রমাগত আক্রমণ, নারদ নিয়ে সিবিআই-এর চাপ, অমিত শাহের বঙ্গ-সফর নিয়ে জেরবার হয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারই মোকাবিলায় মমতা নতুন হাতিয়ার খুঁজছেন।
তবে মমতাকে লাগাতার আক্রমণের পথ থেকে সরে আসছে না বিজেপি। বরং তারাও আক্রমণের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। মমতার পরিবারের সদস্যের দিকে আঙুল তুলে কৈলাস বিজয়বর্গীয় কলকাতায় বলেন, ‘আমরা প্রশ্ন করতে চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের আয়ের উৎস কী? তাঁর ভাইপো কিভাবে কোটি টাকার বাংলোর মালিক হলেন? এই উত্তর দিন আগে। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে, কোন টাকা কোথায় যাচ্ছে। পরে সে কথা বলব আমরা। সূত্র- এবেলা