বাসে সরকারি ভাড়ার তালিকা দেখতে চাওয়ায় বা তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাওয়ায় অনেক যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার এমনকি হাত তোলার মতো ঘটনা ঘটছে। যাত্রী বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে তেড়ে এসে নানাভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বেলা একটায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী। সিটিং সার্ভিস নৈরাজ্য বন্ধ করার পর যাত্রী-ভোগান্তি পর্যবেক্ষণ শেষে এ সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
পরিবহন মালিকরা রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস, গেট লক, স্পেশাল সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিলেও ভাড়ায় চলছে ব্যাপক নৈরাজ্য। অনেকে গত রোববার থেকে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সোমবারও ছিল একই অবস্থা।
এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ভাড়া যেমন কার্যকর হচ্ছে না, তেমনি রাস্তায় গাড়িও কম। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে নগরে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, “গত দুই দিনে নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহনের প্রায় ৪০ শতাংশ রাস্তায় নামানো হয়নি। বাসে চলতে গিয়ে নারী, শিশু ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকেরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “বাসে সরকারি ভাড়ার তালিকা দেখতে চাওয়ায় বা তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাওয়ায় অনেক যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার এমনকি হাত তোলার মতো ঘটনা ঘটছে। যাত্রী বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে তেড়ে এসে নানাভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে।”
মিরপুর রুটে অধিকাংশ বাসে মাস্তান প্রকৃতির তিন-চারজন করে লোক রাখার দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানান তিনি।
মো. মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে ‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ ধর্মঘটে যেসব বাস জড়িত, তাদের রুট পারমিট বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একদিকে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। নগরীতে যাত্রী-ভোগান্তি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে রাজধানীতে ‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘট চলছে। যেসব বাস এই ধর্মঘটে যুক্ত আছে, এগুলোর রুট পারমিট বাতিল করাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “দুর্ভোগ হতে পারে, এটা মনে রেখে ভালো কিছু পাওয়ার জন্য এই দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে। মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমরা অসহিষ্ণু হলে অভিযান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযানের নামে ‘ইঁদুর-বেড়াল খেলা’ চলছে বলে মন্তব্য করে সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, “অভিযান শুরু হলে বাসগুলো লুকিয়ে রাখা হয়, রাস্তায় নামে না। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে যাত্রীদের।” এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।