বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাংবাদিকদের অবসরগ্রহণের বয়স ৬৫ করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং বার্তা সম্পাদক আমিরুল মোমেনিনের দায়ের করা দু’টি পৃথক রিট পিটিশনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও একেএম শহিদুল হক এর বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে বাসসের চাকরি বিধিমালার ৫৩ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়ার ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির বেতন ভাতাদিসহ সব পাওনা ২ মাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন।
রিটের বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ইফতারের পরে এতিহ্যগতভাবেই সম্পাদক, ইউনিয়ন নেতা ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই সভায় বাসসের সাংবাদিকদের চাকরির বয়স ৬০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার দাবি উত্থাপন করা হয়। তাক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী দাবি মেনে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদকে বিষয়টি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে বাসসের পরিচালনা বোর্ড সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে সাংবাদিকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িযে ৬৫ করে। বাসস ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্যমন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠায়।
মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক আহবান করেন। বৈঠকে তথ্যসচিব সভাপিতত্ব করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালগুলোর পৃথক পৃথক মতামত জানতে চাওয়া হয়।
কিন্তু আবেদনকারী আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়াকে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার সুফল থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপন করা হয়। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন জানালে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে ১০ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পাবলিক এনাউন্সমেন্ট বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
এরপরও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক কারসাজির মাধ্যমে বাসসের সাংবাদিকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ না করে ৬২ করা হয়। এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রিট করেন আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া ও আমিরুল মোমেনিন।
দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ বাসস সাংবাদিকদের অবসরের বয়স ৬৫ করার নির্দেশ দেন। আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার।