সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে কলকাতায় কয়লার ব্যবসা করতেন খুলনা শহরের সোনাডাঙার বাসিন্দা আনোয়ার আলী। তার নাতি-নাতনিরাও নানার মুখে গল্প শুনেছেন, রূপসা নদীর কাছে রেল স্টেশন থেকে তিনি কলকাতার শেয়ালদাগামী ট্রেনে চড়তেন। সারাদিন কাজ করে ফিরে আসতেন সন্ধ্যাবেলার ট্রেনে।
ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ঠিকঠাক থাকলে সেই খুলনা থেকে কলকাতা ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জারি’ করার স্বপ্ন আবারও সত্যি হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময়ই খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন পরিসেবা চালু করা হবে বলে আপাতত স্থির হয়েছে।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সংবাদ মাধ্যম কে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, আগামী ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে থাকাকালেই যেন এই ট্রেন সেবা উদ্বোধন করা যায়। যতদূর জানি, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই ট্রেন সার্ভিস চালু ছিল। ফলে আবার যদি কলকাতা-খুলনার মধ্যে ট্রেন সংযোগ স্থাপন করা যায়, তাহলে প্রায় ৫২ বছর পর আবার চালু হবে এই সেবা।’
বাসের চেয়ে ট্রেনের যাত্রা অনেক বেশি আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী বলে বাসের চেয়ে খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে বলে মনে করছে দুই দেশই।
তবে রাষ্ট্রদূত মোয়াজ্জেম আলী সীমান্তে কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে যেন এই আন্তর্জাতিক ট্রেন যাত্রার সময় সীমান্তে কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের ঝামেলাটা কম হয়। এসব কড়াকড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে গেলে মানুষ অবশ্যই বিরক্ত বোধ করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো মনে করি, ইউরোপে যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় ট্রেনের ভেতরেই মোবাইল কাস্টমস চেকিং সেরে নেওয়া যায়, তাহলে ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটা করা সম্ভব।’
ট্রেনের ভেতরেই মোবাইল কাস্টমসের চেকিংয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে কিনা, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে নিয়মিত ট্রেন যোগাযোগ চালু করতে পারলে তা ভারত ও বাংলাদেশের কানেক্টিভিটিতে নিঃসন্দেহে বড় একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে।
খুলনা-কলকাতা ট্রেন সেবা চালু হলেও যাত্রীরা দিনের কাজ সেরে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন কিনা, জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম আলী বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, অসুবিধার কোনও কারণ নেই। আগের ট্রেনের তুলনায় এখনকার ট্রেনের গতিও হবে অনেকগুণ বেশি। ফলে দিনের কাজ দিনে সেরে কলকাতা থেকে খুলনায় ফেরাটা খুবই সম্ভব হবে বলেই আমি মনে করি।’
কলকাতা-খুলনা ট্রেন সার্ভিসের বাইরেও আগামী ৮ এপ্রিল দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিলে পণ্যবাহী একটি ট্রেনেরও ‘রিমোট ফ্ল্যাগ-অফ’ বা দূর থেকে যাত্রা শুরুর সঙ্কেত দেবেন। ট্রেনটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে ডিজেল নিয়ে রওনা দেবে বাংলাদেশে পার্বতীপুরের দিকে। দুই দেশের জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই ট্রেনটিকেও একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে দেখা হচ্ছে। দিল্লির রাজপথে এরই মধ্যে দুই প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ এই ট্রেনের পোস্টারও চোখে পড়ছে।
ফলে শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে ট্রেন-কূটনীতিও একটি আলাদা মাত্রা পেতে চলেছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।