বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী দিপু চন্দ্র রায়ের বাবার মৃত্যুতে প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) মীর তামান্না ছিদ্দিকাকে দায়ি করে তার পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে মিডিয়া চত্বরে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বক্তৃতাকালে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রক্টর মীর তামান্না ছিদ্দিকা সেচ্চাচারিতা করে দীপুকে পাঁচ ঘন্টা আটকিয়ে রাখে। তার আটকের সংবাদ পেয়ে তার বাবা অনিল রায় মারা যান। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরকে দায়ী করে তার অপসারণ দাবি করেন। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মানববন্ধন শেষে উপাচার্যককে স্মারকলিপি প্রদান করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) মীর তামান্না ছিদ্দিকা বলেন, একটা মিথ্যা অভিযোগে যদি আমার বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি ও উপাচার্য বরাবর স্মারক লিপি দেওয়া হয় । তাহলে তো কিছু করার নেই। উপাচার্য স্যার আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। আর আমাকে টিজ করার কারণে দিপু রায়কে সাময়িক সময়ের জন্য আটক রাখা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে যদি এতো বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে তো বাংলাদেশে আইন ব্যবস্থা উঠে যাবে।
মানবব›ধনে অংশগ্রহনকারী গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব হলো সাধারন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া। সেখানে প্রক্টরের কাছেই যদি সাধারন শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে আমরা সাধারন শিক্ষার্থীরা কার কাছে নিরাপত্তা চাইব। যেখানে প্রক্টরের কাছে আমাদের অভিযোগ দেয়ার কথা ছিলো সেখানে প্রক্টরের বিরুদ্ধেই আমাদেরকে অভিযোগ করতে হচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়ের রক্ষক (প্রক্টর) এখন ভক্ষক হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মানববšধনে অংশগ্রহনকারী ডিজেস্টার ম্যানেজম্যান্টের শিক্ষার্থী মোস্তফা তার বক্তব্যে বলেন, কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ ছাড়াই শুধুমাত্র প্রক্টরের মৌখিক নির্দেশে কেন দীপুকে ৫ ঘন্টা ধরে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক করে রাখা হলো আমরা এর জবাব চাই। উনি একজন প্রক্টর হয়েছেন বলে তার ইচ্ছামত যাকে খুশি তাকে আটক করে শাস্তি দিবেন কেন? দীপু যদি তাকে কোন ভাবে টিস করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যাবস্থা না নিয়ে তাকে আটক করে রাখা হলো।
তিনি আরও বলেন, যিনি শিক্ষার্থীদেরকে যখন তখন মামলা দেয়ার হুমকি দেয় তিনি কখনো আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম মঈন বলেন, একজন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর শুধুমাত্র মৌখিক নির্দেশে কোন আইনে একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এবং অন্ধকার রুমে ৫ ঘন্টা আটকে রাখেন? কিভাবে তিনি একজন প্রক্টর হয়ে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সব ধরনের মামলা দেয়ার হুমকি দেয়?
এদিকে দীপুর বন্ধু মেহেদী বলেন,“দীপু তার বাবার লাশ সামনে রেখে আমাদের বলেছে যে, সে প্রক্টর ম্যামের সাথে কোন ধরনের বেয়াদবি করেনি । কাজেই তার বিরুদ্ধে প্রক্টর যা করেছেন তা সম্পূর্ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অন্যায়।গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ ভ’ইয়া বলেন, দীপুকে আটকের খবর পেয়ে তার বাবার করুন মৃত্যু হয়েছে। দীপুর বাবা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন। তার বাবার মৃত্যুর পর এখন কে দীপুর বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনার খরচ চালাবে?
উল্লেখ্য যে, গত ১৪ই এপ্রিল শুক্রবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী দিপু রায়ের পুলিশ কর্তৃক আটকের সংবাদে হাটস্ট্রক করেন তার পিতা অনীল রায়। নীলফামারী সদরের নিজ বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান দীপুর বাবা অনীল রায়।