
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী সদরে মস্তিস্ক বিকৃত বেওয়ারিশ কিশোরির প্রাণ গেল বেপরোয়া নাবিল পরিবহনের নৈশ কোচের চাকায়।
এ মর্মান্তিক নিহতের ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত একটার দিকে সোনালীব্যাংক লি: শাখার সামনে রংপুর-বগুড়া জাতীয় মহাসড়কে।
হাইওয়ে পুলিশেরর এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ঘাতক কোচটি গোবিন্দগঞ্জে আটক করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয়, থানা ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাত বেওয়ারিশ কিশোরির দীর্ঘ ১ বছর আগে পলাশবাড়ীতে আগমন ঘটে।
গত শীত মৌসুম থেকে আনুমানিক ১৪/১৫ বছর বয়সি মস্তিস্ক বিকৃত উজ্জল শ্যামবর্ণের ধূসর-ময়লা ফ্রক-পাজামা পরিহিত কিশোরি পাগলি দিনের বেলায় সদরের বিভিন্ন স্থানে উদাসিন ঘোরাফেরা করত। রাতের বেলায় সদরের মোফাজ্জল মার্কেটের বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়তো।
রংপুর জলঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা ওই কিশোরি দিনভর স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ি-পথচারিসহ আন্তরিক দয়ালুদের আনুকূল্যেই তার ক্ষুধা নিবারন করতেন।
কেউ টাকা দিলে নিতেন। অনেক সময় আবার নিতেন না। সংগৃহিত নিজের অর্থেই খাওয়া-সেরে নিতেন।
ওই মার্কেটের ব্যবসায়িরা জানান, সে দিনভর অন্যত্র ঘুরলেও রাতের বেলায় তার ঘুমানোর নির্দিষ্ট স্থানে চলে আসতেন।
তারা জানান, উত্তরাঞ্চলে জন্মস্থান বাড়ী হলেও সে ঢাকার যে কোন অভিজাত এলাকার বাসা-বাড়ীতে সম্ভবত গৃহপরিচারিকার কাজ করে থাকতে পারে। অনেক সময় মাঝে-মধ্যে শিক্ষিত ব্যক্তির মত সে সুন্দর গোছালো-সাবলীল ভভ্র ভাষায় কথাও বলতো।
দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় অন্যত্র থাকলেও রাতের বেলায় ওই মার্কেটের অন্ধকার বারান্দা ছাড়া সে ঘুমাতে পারতো না।
প্রচন্ড শীতেও তার একমাত্র শরীরের পোষাক ছাড়া বাড়তি কোন শীতবস্ত্র গায়ে দিতেন না। শীতে যুবুথুবু কাতর বুদ্ধি প্রতিপ্রতিবন্ধি পাগলীর করুনদশা নিবারনে অনেকেই শীতবস্ত্র সহায়তা করলেও তা কখনো সে গায়ে দিতো না।
অন্যান্য দিনের ন্যায় বুধবার রাত গভীরে বির-বির করে এলোমেলো কথা বলতে-বলতে সে সোনালী ব্যাংক শাখার সামনে যেতে না যেতেই ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের বেপরোয়া একটি কোচ তার প্রাণ কেড়ে নেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বেওয়ারিশ কিশোরির লাশ প্রথমে গোবিন্দগঞ্জ নেয়া হবে। এরপর সুরতহাল রিপোর্ট শেষে গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হবে।
সেখানে ওয়ারিশের অপেক্ষায় মরদেহ ৩দিন থাকবে। পরবর্তিতে কোন ওয়ারিশ পাওয়া না গেলে সৎকারের জন্য লাশ বেসরকারি আঞ্জুমান মুফিদুল সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হবে।
দীর্ঘদিনের পরিচিত কিশোরি পাগলির সড়ক দূর্ঘটনায় আকস্মিক মৃত্যুতে স্থানীয়দের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।